গ্রেনেড হামলার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদনের ওপর হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করার জন্য প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে আর্জি জানাবেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
রোববার (২৯ আগস্ট) অ্যাটর্নি জেনারেল তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
তারেক জিয়ার দণ্ড বাড়ানোর বিষয়ে আপিল আবেদন করা হবে কি-না, জানতে চাইলে আটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এখনো মামলার শুনানি প্রক্রিয়াধীন। পুরো নথি পর্যালোচনা শেষ হয়নি। মামলার নথিপত্র পুরোপুরি দেখে তারেক জিয়ার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো।’
এর আগে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদনের বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠনে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে পরামর্শ দেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
গত ২৮ আগস্ট রাজধানীতে সাংবাদিকদের এক কর্মশালায় আইনমন্ত্রী জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদনের শুনানির বিষয়ে হাইকোর্টে বেঞ্চ গঠনে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।
ওই অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ভয়াবহ ঘটনার মামলায় উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের বিষয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতের অবকাশের আগেই বেঞ্চ গঠন করতে বলেছি।’
২০২০ সালের ১৬ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপার বুক সুপ্রিমকোর্টে আসে। এরপর থেকে মামলায় বিচারিক আদালতে দেওয়া রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও হাইকোর্টে করা আপিল শুনানির জন্য রয়েছে। এ হামলা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়সহ ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথিপত্র ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
এর আগে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ওই রায় ঘোষণা করেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জন
বিচারিক আদালতের রায়ে ১৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গি মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ বাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন। এর মধ্যে আবদুর রহিম করোনা আক্রান্ত হয়ে গত রোববার হাসপাতালে মারা গেছেন।
যাবজ্জীবন যাদের
বিচারিক আদালতের রায়ে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তারা হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, আরিফুল ইসলাম আরিফ, জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুর রউফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মুরসালিন, মুত্তাকিন, জাহাঙ্গীর বদর, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. ইকবাল, রাতুল আহমেদ, মাওলানা লিটন, মো. খলিল ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।
অন্য মামলায় তিনজনের ফাঁসি কার্যকর
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট আসামি ছিলেন ৫২ জন। তাদের মধ্যে হুজি-বি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলমের ফাঁসি কার্যকর হয় ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায়। আরেক আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়। বাকি ৪৯ জনের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালত রায় দেন।
বিভিন্ন মেয়াদে যাদের সাজা
বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত ১১ জন হলেন- মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমীন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, জোট সরকার আমলের তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমীন।
নথিপত্র অনুযায়ী, তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ১৭ জন এখন পলাতক।
এফএইচ/এএএইচ/জিকেএস