আগের দুই দিন সকালে কলকাঠি নেড়েছেন হাসান আলি, শাহিন শাহ আফ্রিদিরা। তাদের প্রচণ্ড গতি ও সুইংয়ে শুক্র ও শনিবার প্রথম সেশনে যথাক্রমে চার ও ছয়টি করে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন প্রথম সেশনেও কি অমন কোনো ঘটনা ঘটবে?
বাংলাদেশ ভক্তরা অমন আশায় উন্মুখ হয়েছিলেন। সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাসও শনিবার খেলা শেষে বলেছিলেন, আমাদের লক্ষ্যই তৃতীয় দিন সকালে দুই-তিনটি উইকেট তুলে নেয়া। তাহলে দুই দল সমান্তরালে এসে যাবে।
আশার বিপরীতে সংশয়ও ছিল। বারবার মনে হচ্ছিল, শাহিন আফ্রিদি, হাসান ও ফাহিমরা যেভাবে গতি ও সুইংয়ের মিশেলে সফল হয়েছেন এবাদত আর আবু জায়েদ রাহি কি তা পারবেন? অগ্রহায়নের শিশির ভেজা সকালের উইকেট থেকে বাড়তি সুবিধা আদায়ের সেই সামর্থ্য কি আছে বাংলাদেশ পেসারদের?
ভক্ত-সমর্থকদের এ সংশয় মাখা প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব ছিল পাকিস্তানের সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলির কণ্ঠে। এ পাকিস্তানি ওপেনার দ্বিতীয় দিন খেলা শেষেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, উইকেট কিন্তু স্পিনারদের দিকে ঝুঁকছে, বল ঘুরছে সাপের মতো, গ্রিপও করছে।
বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুলও হয়তো উইকেটের গতিপ্রকৃতি খুব ভাল বুঝেছিলেন। জেনে গিয়েছিলেন উইকেটে স্পিন ধরছে, বল ঘুরতে শুরু করছে। যে কারণে আজ সকালে এক প্রান্তে পেসার ব্যবহার করলেও অন্যদিকে স্পিন দিয়ে শুরু করেন আক্রমণ।
একদিকে পেসার এবাদত ও অন্যদিকে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন মুমিনুল। তা অব্যর্থ দাওয়াইয়ের মত কাজ করলো। আজ সকালে পেসার এবাদত টানা বোলিং করে রানের গতি কমিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি। তার হাতে ব্রেক থ্রু আসেনি।
কাজ যা করার করে দিয়েছেন দুই স্পিনার তাইজুল ও মিরাজ। তাইজুল দিনের ও নিজের প্রথম ওভারে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দিলেন আগের দিন ধৈর্য্যের প্রতীক হয়ে ওঠা পাকিস্তাান ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিককে। ভেতরে আসা বলকে অফসাইডে খেলতে গিয়ে টার্নে পরাস্ত হন শফিক।
উইকেটে এসেই তাইজুলের আরেক শার্প টানে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন টেস্টে পাকিস্তানের এই দলের সবচেয়ে সফল ব্যাটার আজহার আলী। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলের আরেক শিকার ছিলেন বাঁহাতি ফাওয়াদ আলম। তিনিও তাইজুলের স্পিনের কাছে হার মানেন। এ
অন্যদিকে বল ঘুরিয়েছেন অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজও। দারুণ এক ডেলিভারিতে অফস্টাম্প উপড়ে গেছে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমের। মোদ্দা কথা, তাইজুল ও মিরাজের স্পিন ঘূর্ণিতে বেসামাল আব্দুল্লাহ শফিক, আজহার আলী, বাবর আজম ও ফাওয়াদ আলমের মতো উইলোবাজ।
বিনা উইকেটে ১৪৫ থেকে রোববার প্রথম সেশন শেষে পাকিস্তানের স্কোর ৪ উইকেটে ২০৩ রান। এই রানটা ৫ উইকেটে হতে পারতো। কিন্তু তাইজুলের বলে ক্যাচ দিয়েও স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল শান্তর ব্যর্থতায় বেঁচে এখনও ক্রিজে আবিদ আলি। লাঞ্চ পর্যন্ত ১২৭ রানে নট আউট আবিদ আউট হয়ে যেতে পারতেন ১১৩ রানে।
তখন টাইগাররা পাকিস্তানিদের ওপর আরও চেপে বসতে পারতো। এখন পর্যন্ত আবিদই একদিক আগলে রাখার কাজটি করে যাচ্ছেন। টার্নিং পিচে তাইজুল-মিরাজের বোলিং সামাল দিচ্ছেন একাই। তাকে ফিরিয়ে দিতে পারলে পাকিস্তানের ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করা যেত। তখন পাকিস্তান আরও পেছনের পায়ে চলে যেতো।
এখন আগের দুই দিনের মত দ্বিতীয় সেশনে যদি উইকেট একটু স্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন শান্তর এই ক্যাচ নিতে না পারাটা ভোগাতে পারে। দেখা যাক লাঞ্চের পরও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে বল ঘোরে কি না? স্পিন করতে থাকলে তাইজুল-মিরাজকে খেলা কঠিন হবে। তখন লিডের সম্ভবনা অনেক বেশি বাংলাদেশের।
এআরবি/এসএএস/জেআইএম