চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতার হোসেন প্রকাশ্যে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ‘লোড’ করে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তার ওই ঘোষণার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচনী প্রচারণায় মাইক হাতে এ ঘোষণা দেন তিনি। যদিও ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিকে ‘এডিট করা’ বলে দাবি করেছেন আকতার।
ভিডিওটিতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কাছে সবসময় মাল (অস্ত্র) দুইটি থাকে। যেখানে যেভাবে হোক, আগে কাজ করে ফেলবেন। পরে খেলা দেখা যাবে। সবসময় আমার মালও লোড। আমিও প্রস্তুত।’
এ সময় তার অনুসারীরা ‘খেলা হবে, খেলা হবে’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি লাইসেন্স করা শটগান দিয়ে গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে। এতে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হন।
গুলিবিদ্ধ একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক প্রার্থীর গণসংযোগ চলাকালে আকতার হোসেন ও তার কর্মীরা শটগান দিয়ে গুলি ছোড়েন। এতে আমার শরীরে ৯৯টি স্প্লিন্টার ঢোকে। বর্তমানে আমি এক প্রকার অচল হয়ে পড়েছি।’
অন্যদিকে, মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিম উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে আকতার হোসেনের অস্ত্র জব্দ করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেজন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও করেছেন তিনি। যদিও এ অভিযোগ প্রশাসন আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ তার।
জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, লাইসেন্স করা শটগান ছাড়াও আকতার হোসেনের কাছে একাধিক অবৈধ পিস্তল আছে। এসব অস্ত্র দিয়ে এলাকায় নিয়মিত গুলি ছোড়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আমার গণসংযোগে তার অস্ত্রের গুলিতে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আমি অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু প্রশাসন শোনেনি। এখন তো আকতার নিজেই ঘোষণা দিলেন তার কাছে দুইটি অস্ত্র আছে। যেগুলো লোড রাখেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অস্ত্র ব্যবহার করছেন বলে আকতার নিজের মুখে বলেছেন। এখন যদি প্রশাসন অস্ত্র জব্দ ও তাকে আইনের আওতায় না নেয়, তাহলে নির্বাচনের দিন লাশ পড়লে এর দায় কি প্রশাসনের ওপর পড়বে না?
শটগানের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আগ্নেয়াস্ত্র শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আকতার হোসেনকে শটগানের লাইসেন্স দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আকতার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমার কাছে একটি লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে৷ এটি খাগরিয়ার সবাই জানে। এই অস্ত্র দিয়ে বিগত সময়ে কারও ক্ষতি করিনি। আমরা খুবই শান্ত প্রকৃতির লোক। আমরা কোনো সময় কোনো মামলার আসামিও হইনি, বাদীও হইনি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ঘিরে আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। কিছু দুষ্ট প্রকৃতির হ্যাকার আমার বক্তব্য বিকৃত করে মিথ্যা ভিডিও বানিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। আমি এ ধরনের কোনো কথা বলিনি। আমার ভিডিও এডিট করে অনলাইনে ছড়িয়েছে তারা। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা এসব কাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রশিদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ভিডিওটি আমি একটু আগে দেখেছি। এ বিষয়ে আমি খোঁজ নিচ্ছি।
মিজানুর রহমান/এইচএ/এএসএম