রাইসুল ইসলাম খোকন, সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রশাসনের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র কিংবা সরকারি কোনো অনুমোদন ছাড়াই জামালপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলার যত্রতত্রভাবে বেড়ে চলছে ইটভাটার সংখ্যা। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ইট ভাটাগুলো অবৈধভাবে গড়ে তুলছে মৌসুমি ইট ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বাসা-বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে বিধি-নিষেধ না মেনেই ২১টি ইটভাটায় চলছে অবৈধভাবে ইট তৈরি। বেশিরভাগ ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে গাছের গুঁড়ি। আবার আবাসিক এলাকা কিংবা ফসলি উর্বর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটাগুলো। ফলে এসব ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া পরিবেশকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং হুমকির মুখে ফেলছে জনজীবন।উপজেলায় ২১টি ইটভাটায় মধ্যে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স রয়েছে তিনটি ইট ভাটার। আর বাকি ইট ভাটাগুলোর কোন লাইসেন্স নেই । তবুও চলছে দেদারছে।ভাটাগুলোতে কোনো নিয়মে ইট পোড়ানো হচ্ছে তার সঠিক উত্তর নেই জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সংশ্নিষ্ট কোনো কর্মকর্তাদের কাছে।
সূত্রে জানা যায়, ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদফতর থেকে অনুমতি বা ছাড়পত্র নিতে হয়, যার মেয়াদকাল থাকে এক বছর। তারপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইস্যু করা হয় তিন বছর মেয়াদি লাইসেন্স। জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থাকে ম্যানেজ করেই ভাটা মালিকরা ইট পুড়িয়ে থাকেন।
ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে গাছের গুঁড়ি।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার আওনা, ডোয়াইল, পোগলদিঘা, মহাদান ও ভাটারা ইউনিয়নসহ পৌরসভাস্থ জনবসতি এলাকায় এসব ইটভাটা স্থাপিত। বিশেষ করে ভাটারা ইউনিয়নে কাসারীপাড়া এলাকায় মেসার্স ভাই ভাই ব্রিকস ও চরপাড়া এলাকায় মেসার্স সাদিয়া ব্রিকস সনাতন পদ্ধতিতেই অবাধে কয়লার পরিবর্তে বনজ ও ফলজ গাছের গুঁড়ি পুড়িয়ে তৈরি করছে ইট। অধিকাংশ ইটভাটায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তারা শুধু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দেদারসে চালাচ্ছে ইটভাটা। যেখানে নেই কোন প্রশাসনিক তৎপরতা, নেই কোন সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা। এদিকে আইনের প্রয়োগ না থাকায়, যে যেভাবে পারছে সে ভাবেই স্থাপন করছে ইটভাটা। আর নষ্ট করছে কৃষি জমি, বিপর্যয়ের মুখে ফেলছে পরিবেশ ও জনজীবন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ইট ভাটার ম্যানেজার জানান, এবার কয়লার দাম বেশি থাকায়, কয়লা দিয়ে ইট পুড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই খরচ বাঁচাতে আমরা কয়লা পরিবর্তে গাছের গুঁড়ি ব্যবহার করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০০১ সালের ইটভাটা নির্মাণ নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী কৃষি জমি নষ্ট করে এবং মানুষ বসবাস করে, একটি ইটভাটা থেকে ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (টিএসও) ডাঃ বদরুল হাসান বলেন, ইটভাটার সৃষ্ট দূষণের কারণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কালো ধোঁয়ার কারণে ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডা জনিত নানান রোগ দেখা দিতে পারে।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপমা ফারিসা বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তবে কোন ইটভাটার পরিচালক যদি আইন আমান্য করে ভাটা পরিচালনা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
The post সরিষাবাড়ীতে ইটভাটার কালো ধোয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি চরমে appeared first on গোবি খবর.