রাজশাহী নগরীতে পুলিশের বিরুদ্ধে নাঈমুল ইসলাম রিয়াদ (২০) নামে এক যুবককে ফাঁড়ির ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১ জুন) দুপুর ১টার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া থানার মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
নাঈমুল ইসলাম রিয়াদ নগরীর দড়িখরবনা এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের পুলিশ জানিয়েছে, তার মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। এছাড়া হাত ও কোমরেও আঘাত পেয়েছেন ওই যুবক। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে পুলিশ।
নাঈমুল ইসলাম রিয়াদের বাবা নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘তার ছেলেকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে ফাঁড়ির পুলিশ। ফাঁড়িতে নেওয়ার পর ছেড়ে দিতে ২০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন পুলিশ সদস্যরা।’
টাকা না পেলে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তার সামনে থেকেই পুলিশ সদস্যরা চারতলার হাজতখানায় নিয়ে যান। তিনি নিচে নেমে আসার কিছুক্ষণ পর ছেলের পড়ে যাওয়ার খবর পান।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, তার ছেলে একসময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। পরে ঢাকায় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করেন। সেখান থেকে পুরো সুস্থ হওয়ার পর তাকে রাজশাহীতে ফিরিয়ে আনা হয়। তিনি ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। ফুডপান্ডায় তার কাজেরও সুযোগ হয়েছিল। বুধবার তার প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি নগরীর নিউমার্কেট এলাকার ফুডপান্ডার অফিসে যান। বিরতিতে সেখান থেকে বাড়িতে গিয়েছিল রিয়াদ। তিনি তখনো সেখানেই বসেছিলেন। পরে ছেলেকে উপশহর নিউমার্কেটের পেছন থেকে তুলে নিয়ে আসে মালোপাড়া ফাঁড়ির একটি দল। বিলম্ব দেখে তিনি ছেলের মোবাইলে ফোন দিয়ে ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা জানতে পারেন।
নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কারণ ছাড়াই তার ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। তাছাড়া যে এলাকা থেকে নিয়ে গেছে ওই এলাকাটি আরেক ফাঁড়ির আওতায়। এক ফাঁড়ি থেকে অন্য ফাঁড়িতে নেওয়ার সময় মালোপাড়া ফাঁড়ি থেকে পুলিশ আমাকে জানায়, ছেলের কাছে হেরোইন পাওয়া গেছে। ছেলেকে ছাড়াতে হলে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে।
অভিযোগকারীর দাবি, হয়রানি ও ছেলেকে জিম্মি করে টাকা হাতানোর জন্য পুরো ঘটনাটিই সাজানো। এই ঘটনায় তিনি নিরুপায়। ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চান এই বাবা।
‘হেরোইন দিয়ে ফাঁসিয়ে অর্থ দাবির’ অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও নগরীর মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক আবু হায়দারের মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে এনিয়ে তার মন্তব্য মেলেনি। পরে তার মোবাইল নম্বরে একটি ক্ষুদে বার্তা প্রদান করা হয়।
তবে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, দুপুরের দিকে মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির একটি টহল দল ওই যুবককে মাদকসহ আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। ফাঁড়িতে নিয়ে নাম- ঠিকানা লেখার সময় ওই যুবক দৌড়ে চারতলার ছাদে উঠে টপকে বেলকনির পাইপ বেয়ে নামার চেষ্টা করে। কিন্তু পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। ওই সময় নিচে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নেন। পুলিশ পাহারায় তার চিকিৎসা চলছে।
ওই যুবক কীভাবে ছাদে গেলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, মালোপাড়া ফাঁড়ি পুলিশের অসর্তকতার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে।
অভিযুক্ত যুবকের বাবার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, তার বাবার অভিযোগ সঠিক নয়।
অভিযুক্ত যুবকের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হলেই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফয়সাল আহমেদ/এফএ/জিকেএস