সাইফুর রহমান তুহিন
স্বচ্ছ পানির লেক এমন একটি জলাভূমি যেখানকার পানিতে পুষ্টিদায়ক উপাদান কম থাকে। এর অর্থ হলো এ জাতীয় লেকে জলজ উদ্ভিদ ও শ্যাওলার অস্তিত্ব কম।
ভারত জুড়ে এরকম চমৎকার কিছু লেক আছে। জম্মু ও কাশ্মীরেই আছে এরকম ছবির মতো সুন্দর ঝকঝকে কিছু লেক। এসব প্রাকৃতিক লেকের বেশিরভাগই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উচ্চতায় ও লোকালয় থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় এগুলো মানবসৃষ্ট দূষণমুক্ত।
এগুলোর অনেকটিই ধর্মীয়ভাবে পবিত্র বলে স্থানীয় অধিবাসীরাই এগুলোর পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি দেখভাল করে থাকে। এখানে ভারতের বহুল পরিচিত কিছু স্বচ্ছ পানির লেক সম্পর্কে জানানো হলো-
গডসার লেক
সোনামার্গ থেকে আনুমানিক ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গডসার লেক জম্মু ও কাশ্মীরের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন লেকগুলোর একটি। তবে এই লেকে সব সময় যাওয়া যায় না। জুন-সেপ্টেম্বর হচ্ছে গডসার লেক ভ্রমণের সেরা সময়। কারণ লেকের প্রকৃত সুন্দর রূপ ফুটে ওঠে তখনই।
অন্যান্য স্বচ্ছ পানির লেকের মতো এখানকার মাছগুলো বড় বড়। এ জাতীয় লেকে সাধারণত বিচিত্র প্রজাতির মাছের উপস্থিতি দেখা যায় না তারপরও এটি মাছ শিকারীদের কাছে পরম কাঙ্খিত এক জায়গা।
নান্ড কল লেক
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের গান্ডারবাল জেলায় অবস্থান নান্ড কল লেকের। এই লেকের আরও দুটি নাম আছে- নান্দি কুন্ড ও কালোডাকা লেক। এটি ভারতের সবচেয়ে পবিত্র লেকগুলোর একটি বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে।
অনেক উচ্চতায় অবস্থিত লেকটির বিস্ময়কর রূপ দেখা যায় গ্রীষ্মকালে যখন এটির চারপাশে চমৎকার সব পাহাড়ি ফুল ফুটতে থাকে ও সুরভি ছড়ায়। অনুমতি সাপেক্ষে এই লেকেও মাছ শিকার করা যায়।
তসো মরিরি লেক
অনুবাদ করলে তসো মারিরি লেকের অর্থ দাঁড়ায় পার্বত্য লেক। লাদাখ এলাকার চাংথাং মালভূমিতে অবস্থিত এই লেক ‘তসো মরিরি ওয়েটল্যান্ড রিজার্ভ’এর একটি অংশ। এর অর্থ হলো এটি পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তসো মরিরি হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অধিক উচ্চতার বৃহত্তম ভারতীয় লেক।
বৈশিষ্ট্যগতভাবে এটি স্বচ্ছ পানির লেক। বিস্ময়করভাবে এই লেকে যথেষ্টসংখ্যক পাখি ও জীবজন্তুর আবাসস্থল। সেখানকার বেশিরভাগই পরিযায়ী বা অতিথি পাখি। এদের মধ্যে আছে কালো গলাবিশিষ্ট সারস যা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি।
প্যানগং লেক
চীন-ভারত সীমান্তে লাদাখ এলাকায় অবস্থিত প্যানগং একটি জনপ্রিয় লেক। নজরকাড়া সৌন্দর্যের কারণে অনেক পর্যটকই এটিকে পছন্দের গন্তব্যের তালিকায় রাখেন। তবে আপনি হয়তো জানেন না যে, প্যানগং লেক ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পাখিপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি।
এর পাশাপাশি এটিও জেনে রাখা ভালো যে, স্পর্শকাতর জায়গায় অবস্থান হওয়ায় সামরিক কারণে প্যানগং লেক একটি সংরক্ষিত এলাকা। এটি আবার একটি স্পর্শকাতর বন্য এলাকা যেহেতু এখানে আছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পরিযায়ী ও বিলুপ্তপ্রায় পাখি ও পরিচিত কিছু বন্যপ্রাণী।
টারসার লেক ও মারসার লেক
অনেক উচ্চতায় অবস্থিত এই স্বচ্ছ লেক দুটি টুইন সিস্টার বা যমজ বোন নামেও পরিচিত। এই নাম শুধু মুখোমুখি অবস্থানের কারণেই নয়, এর পাশাপাশি দুই জায়গার পানির স্বচ্ছতার জন্যও। যে একটি জিনিস লেক দুটিকে বিভক্ত করেছে তা হলো একটি পর্বতমালা।
শীতকালে দুই লেকের পানিই বরফশীতল হয়ে যায় আবার গ্রীষ্মকালে বিপুল পরিমাণ বন্য ফুল ফোটে। তখন অনিন্দ্যসুন্দর এক রূপ ধারণ করে প্রকৃতি। পরিযায়ী পাখিরা এখানে আসে প্রজননের জন্য। আর এসব কারণেই লেক দুটি জনমানুষের উপদ্রববিহীন ও দূষণবিহীন নির্মল ও বিশুদ্ধ জলাধার।
শেশনাগ লেক
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অধিক উচ্চতার এই লেকটি কাশ্মির ভ্যালির অনন্তনাগ জেলায় অবস্থিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লেক যা পাহালগ্রামের অমরনাথ গুহার ঢালে অবস্থিত। অমরনাথ যাত্রার জন্য যেসব পুণ্যার্থীরা আসেন তারা এই দৃষ্টিনন্দন লেকটিতে কিছু সময় কাটিয়ে যান।
গাঙ্গাবাল লেক
যদি আপনি ধর্মীয়ভাবে পবিত্র লেক নিয়ে আলোচনা করেন তাহলে গাঙ্গাবাল লেকের কথা বাদ দেওয়া যাবে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি খুবই পবিত্র জায়গা।
তারা বিশ্বাস করেন, এটি মহাপ্রভু শিবের আস্তানাগুলোর একটি। প্রতিবছর এখানে একটি পুণ্যার্থী উৎসব হয়ে থাকে, যা ‘হারমুখ গাঙ্গাবাল যাত্রা’ নামে পরিচিত। অনেক কাশ্মিরী এতে অংশগ্রহণ করেন।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ভ্রমণ লেখক।
জেএমএস/জেআইএম