করোনা মহামারির ধকল না কাটাতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মজবুত রাখতে রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি জরুরি। এমনটিই জানিয়েছেন মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার এস এম আবুল কালাম আজাদ।
একইসঙ্গে তিনি বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো, কর্মক্ষেত্রে সচেতনতা এবং নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রবাসীদের উদ্দেশে এক বার্তায় তিনি বলেন, করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল সেসময় রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস, সারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সারা বিশ্বের ন্যায় আমরাও আজ এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
তিনি বলেন, বৈধপথে ব্যংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা ডলার রিজার্ভে জমা হয়। যা দিয়ে দেশের আমদানি ব্যয় ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো হয়। দেশের অর্থনীতি গতিশীল হয়, শক্তিশালী হয়।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতি প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশে পৌঁছেছে। দেশের চাহিদা মেটাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স।
হাইকমিশনার আরও বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন। গত বুধবার একদিনেই ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একদিনে পাঠানো প্রবাসীদের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
দেশের অর্থনীতিতে এ গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
তিনি জানান, প্রবাসীদের দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে সরকার এরইমধ্যে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে, যা বর্তমানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রবাসী যে কেউ এখন থেকে এক লাখ টাকা দেশে পাঠালে সঙ্গে আরও দুই হাজার পাঁচশত টাকা প্রণোদনা হিসেবে পাবেন।
ইতোপূর্বে ৫ লাখের বেশি টাকা পাঠালে প্রণোদনার টাকা পেতে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল, কিন্তু বর্তমানে যে কোনো অংকের টাকা পাঠানো হোক না কেন, কোনো কাগজপত্র জমা দেওয়া ছাড়াই প্রণোদনার টাকা ব্যাংকে জমা হয়ে যাবে- যোগ করেন হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠালে পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান নিশ্চিত হয়। এছাড়া দেশে সে আয় বৈধ বলেও বিবেচিত হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের আমদানি ব্যয় মেটানো ও দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখার লক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। সেজন্য জরুরি রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি।
দেশের এ প্রয়োজনীয় পরিস্থিতিতে বৈধপথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে অর্থ পাঠানোর জন্য আহ্বান জানান হাইকমিশনার।
এস এম আবুল কালাম বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন ও প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ তথা বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে আমরা যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে এসে বৈধপথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করি।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি মালদ্বীপে সাম্প্রতিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার না করায় বিভিন্ন দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশি প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধারা আহত হচ্ছেন ও মারা যাচ্ছেন। তাই মালদ্বীপের সব প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, সচেতনতা, নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার, নিয়ম মেনে চলা ও সাবধানতা দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমাতে পারে।
মালদ্বীপে বসবাসরত আনডকুমেন্টেড (অনিয়মিত) প্রবাসী বাংলাদেশিদের তিনি বলেন, ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রির আওতায় বৈধকরণ প্রক্রিয়া বর্তমানে চালু রয়েছে। যাদের বৈধ ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট নেই তাদের দ্রুততার সঙ্গে ভিসা/ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করে বৈধভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এ অবস্থায় আনডকুমেন্টেড (অনিয়মিত) প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জরুরি ভিত্তিতে বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার অনুরোধ জানানো হয়।
মালদ্বীপের ভিসা বৈধকরণের জন্য বর্তমানে আপনি যেখানে কাজ করছেন সে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রিতে আবেদন করতে হবে।
এমকেআর/জেআইএম