উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত ১৬ জুন সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জ যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। বানের পানির গতি এতটা ভয়াবহ ছিল যে প্রায় ৪৫ হাজারের উপরে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে নদ, নদীর পানি কমলেও নতুন বিপদ হয়ে এসেছে নদীভাঙন। বানভাসিদের কাছে এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুলেকাবাদ ইউনিয়নের মুনিপুরি গ্রাম। গ্রামটিতে বসবাস ৪ শতাধিক পরিবারের। কিন্তু বন্যা পরবর্তী সময়ে গ্রামটিতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন, ইতোমধ্যে ৬০টিরও বেশি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে সেই পরিবারগুলো এখন কোথায় আছে জানেন না এই গ্রামের মানুষ।
সরজমিনে মুনিপুরি ট্রলারঘাট গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি কমলেও এই গ্রামের মানুষ পড়েছেন নদীভাঙনের কবলে। ইতোমধ্যে গ্রামের বাজারের ১৫টি দোকান বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই দোকান বাঁচাতে বাঁশ দিয়ে ঠিকা দিয়েছেন।
একই অবস্থা মুনিপুরি ঘাটের ট্রলার গ্রামের। মজবুত করে বানানো ইটের দালান কোটা ভেঙে নিমিষেই নদীতে বিলীন হচ্ছে। ৬০টিরও বেশি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
মুনিপুরি ঘাটের ট্রলার গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুন নেছা জাগো নিউজকে বলেন, অনেক কষ্ট করে ঋণ করে বাড়ি বানিয়েছি। কিন্তু যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে বাড়িটা টেকাতে পারব বলে মনে হয় না।
মুনিপুরি ঘাটের ট্রলার গ্রামের বাসিন্দা জমিরুন বেগম জাগো নিউজকে বলেন, বন্যা পানি ঘরে উঠে আসবাবপত্র ভাসিয়ে নিয়ে যায়, ঘরের ক্ষতি হলেও মেরামত করা যায় কিন্তু নদীভাঙনে একবার ঘর বিলীন হয়ে গেলে আর সেটা পাওয়া যায় না। বন্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর নদীভাঙন।
মুনিপুরি ঘাট বাজারের ব্যবসায়ী মমতাজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এই বাজারের ১৫টি দোকান নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। আমার দোকানটা রক্ষা করতে চারদিকে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছি। জানি না শেষমেশ রক্ষা করতে পারব কিনা।
শুধু মুনিপুরি ঘাট ও ট্রলার গ্রাম নয়, সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, নলজুর, বটেরখাল, মহাশিং ও পুরাতন সুরমা নদীর বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙছে নদীর পাড়। জেলার জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, শাল্লা, ছাতক, দোয়ারা, তাহিরপুর, শান্তিগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, গ্রামীণ জনপদ, মসজিদ ও কবরস্থান ইতোমধ্যে নদীগর্ভে গেছে। ভাঙন ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ জানান, বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। সরকার দ্রুত নদী ভাঙন রোধে পদক্ষেপ না নিলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, নদীভাঙন রোধে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় প্রকট আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানে বালু মিশ্রিত বস্তা ফেলা হচ্ছে।
এফএ/জিকেএস