মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্ট কিংবা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড রয়েছে এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করতো একটি প্রতারক চক্র। বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকা ব্যক্তি পরপর তিনবার ভুল পাসওয়ার্ড দিলে অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়। এ সুযোগে প্রতারক চক্র ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের সিভিএন জেনে নিয়ে ভুক্তভোগীকে পাঠানো ওটিপি ব্যবহার করে কার্ডে থাকা টাকা প্রতারকের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়।
এভাবে গত ৫-৬ বছর ধরে ধরে প্রায় কোটি টাকার বেশি প্রতারণার মাধ্যমে একাধিক ভুক্তভোগীর ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এ চক্রের মূলহোতা মো. খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি প্রতারক চক্র বিকাশ, নগদ ও রকেটের অফিসের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এমন একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরে সিআইডি অভিযান পরিচালনা করে রোববার (৩১ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে খোকনকে গ্রেফতার করে।
খোকনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের বিকাশ-নগদ রকেটের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রায় ৫-৬ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রের সব সদস্যের সম্মিলিত প্রয়াসে বিকাশ-নগদ-রকেটের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার কাজটি করতো।
চক্রটি ছয় ধাপে প্রতারণার কাজটি করতো
প্রথম ধাপ: প্রতারক বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে ভুক্তভোগীকে ফোন দিয়ে অ্যাকাউন্ট আপডেট করার জন্য বলে। আপডেট না করলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান তারা।
দ্বিতীয় ধাপ: প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত বিকাশ অ্যাকাউন্টটিতে ভুল পাসওয়ার্ড তিনবারের বেশি দিলে তার অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়।
তৃতীয় ধাপ: প্রতারক ভুক্তভোগীকে জানায় তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা ব্লক হয়েছে। ওই টাকা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করা সম্ভব।
চতুর্থ ধাপ: প্রতারক ভুক্তভোগীর ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের নম্বর ও সিভিএন জানতে চায়।
পঞ্চম ধাপ: ভুক্তভোগী এসব তথ্য সরবরাহ করলে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যে মোবাইল নম্বর সরবরাহ করে সেই মোবাইল নম্বরে একটা ‘‘OTP’’ কোড সংবলিত একটি ম্যাসেজ যায়।
ষষ্ঠ ধাপ: ভুক্তভোগী ম্যাসেজটি রিসিভ করার পর সেই কোডটি প্রতারক জানতে চায়। কোডটি প্রতারক তার কাছ থেকে পাওয়ার পর ভুক্তভোগীর ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা প্রতারক তার নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়।
ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পর পরই তারা তাদের ব্যবহৃত সব আইডেন্টিটি গোপন করে রাখে। গ্রেফতার ব্যক্তি এ পর্যন্ত সে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে প্রায় এক কোটিরও বেশি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে।
বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর আরও বলেন, গ্রেফতার খোকনের ‘‘it's khokon bro’’ ও ‘‘it's khokon bro 02’’ নামের দুটি ফেসবুক পেজ খুলে বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে তাদের তার ফ্রেন্ড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করত। তারপর তাদের অথনৈতিক অবস্থা বুঝে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে সে তার প্রতারণার কার্যক্রম করতো।
টিটি/এমআরএম/জেআইএম