চলতি মাসের প্রথম দিনে ইউরিয়া সারের কেজি প্রতি ছয় টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এরপর ৫ আগস্ট বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এতেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৃষিতে ব্যবহৃত অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। না পারছেন কৃষি কাজ ছাড়তে, না পারছেন ধরে রাখতে।
কৃষকরা জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রতি দশ শতাংশে হালচাষ খরচ ৩২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫০ টাকা হয়েছে। এ বছর বৃষ্টি না থাকায় পানি খরচ ৫০০, খুচরা দোকানগুলোতে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেশি দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে, ধানের চারা রোপনের খরচ ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা হয়েছে, ধান ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কারের খরচ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা হয়েছে। অন্যান্য খরচ বাদ দিয়েই গড়ে প্রতি ১০ শতাংশে খরচ দ্বিগুণ বেড়ে প্রায় ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা হয়েছে।
এছাড়াও সার নিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে রীতিমতো চলছে লুকোচুরি এবং বাড়তি দাম নেওয়ার হিড়িক। আবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষিতে অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়ার কথা বলছেন প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা। এতকিছুর পর ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন চাষিরা।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি এই বছর ৭০ শতাংশ জমিতে ধানচাষ করেছি। প্রতি দশ শতাংশে হালচাষ খরচ ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০০, ধানের চারা রোপনের খরচ ৪০০ থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা হয়েছে। এ বছর বৃষ্টি না থাকায় পানি খরচ দিতে হবে ৫০০, সবেমাত্র ক্ষেতে বিষ দিচ্ছি। এখনো সার কেনা হয়নি। শুনেছি সারের দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার সার ও তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বড়লোক যারা আছে, তাদের চিন্তা নাই। সব খরচ সরকার এখন কৃষকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এখনতো আমাদের না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় নেই। দাম বাড়ানোর আগে আমাদের মতো কৃষকদের কথা চিন্তা করার দরকার ছিল, আমরা এখন কিভাবে চলব।
চর ঈশ্বরদিয়া এলাকার আব্দুল খালেক বলেন, এই বছর আমি ৬ একর আমন ধান চাষ করছি। এবার তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কাঠাতে হালচাষ খরচ বেড়েছে ২০০ টাকা। খরার কারণে পানি কিনতে হবে, এতেও ৫০০ টাকা দিতে হবে। তাছাড়া কাজের লোক পাওয়া যায় না। কাজের লোক আসলেও কাঠা প্রতি চারা রোপন ৬০০ টাকা করে দিতে হবে। এদিকে সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি বস্তা সারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি লাগছে। এমতাবস্তায় আমরা ধানচাষ করে বিপদে পড়েছি। তাছাড়া ধান বিক্রি করতে গেলেও দাম পাওয়া যায় না।
দেড় একর জমি আমন ধান করেছেন কান্দাপাড়া এলাকার জনাব আলী তিনি বলেন, ধানচাষের খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। যাদের টাকা আছে, তারা হাত ধুয়ে বসে আছে। আমরা ধান করলে তারা কিনে খাবে। আমরা তো গরিব মানুষ, আমাদের কৃষিকাজ ছাড়া কোনো উপায় নেই। সরকার তো সব খরচ কৃষকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এখন তো আমাদের মরা ছাড়া উপায় নেই। সরকার যদি আমাদের না দেখে তাহলে আমাদের কৃষি ছাড়তে হবে, না হলে না খেয়ে মরতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, ময়মনসিংহ জেলায় এ বছর আমনে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেহেতু এখন ধানের চারা রোপণ চলছে, তাই কয়েকদিন পরে নির্ধারণ করা যাবে কী পরিমাণ জমিতে রোপণ শেষ হয়েছে। তবে সারের দাম যেন কেউ বাড়তি নিতে না পারে, সেদিকে নিয়মিত মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, সারের দাম বাড়ার ফলে উৎপাদন খরচ যেহারে বাড়ার কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবতা তেমন না। উৎপাদনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক বলেন, সার নিয়ে যেন কোনো ডিলার এবং ব্যবসায়ী ফায়দা লুটতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। ইউএনওদেরকেও বলা আছে, তারাও বিষয়টি সার্বিকভাবে তদারকি করছে। কোথাও বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফএ/এএসএম