বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

দেশে প্রতি ৪ জনে একজন নিরক্ষর

দেশে নিরক্ষরতার হার এখনো আশানুরূপ কমেনি। সরকারি হিসাবে, সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশ। এ হিসাবে এখনো ২৫ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। এই এক চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতার আওতায় আনতে বয়স্ক সাক্ষরতায় নেই নতুন কোনো কার্যক্রম। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগেও দেশের বিশাল এ জনগোষ্ঠী (২৫ শতাংশ মানুষ) এখনো অক্ষরজ্ঞানের আলো পায়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ঝরে পড়া ও স্কুলে যায়নি- দেশে এমন ৬ লাখ শিশুর তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু করা হলেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তাতে শুধু সরকারি অর্থ অপচয়ই হয়েছে। সুফল তেমন আসেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলার ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের’ আওতায় ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় আনা হয়েছে। এরমধ্যে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০ লাখ মানুষকে এর আওতায় আনা হয়েছে। গত ৩০ জুন বয়স্ক সাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এজন্য ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ২৫০টি এনজিওর মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে মৌলিক সাক্ষরতা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। তবে বয়স্কদের সাক্ষরতার আওতায় আনতে নতুন কোনো কার্যক্রম নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে না।

jagonews24

এদিকে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া ও স্কুলে যায়নি এমন ৮-১৪ বছরের ছেলেমেয়েদের জন্য ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন অ্যাডুকেশন প্রোগ্রাম’ শুরু করা হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলায় ২২ হাজার স্কুলের মাধ্যমে ৬ লাখ শিশুকে সাক্ষরতার আওতায় আনাসহ মূলধারায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালোখা করানোর কথা থাকলে করোনার কারণে গত তিন বছর এ কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু করা হলেও বর্তমানে তাদের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মূলধারার পাঠ্যবই পড়ানো হলেও ছয় মাস পর পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের খাতা, কলম, বই, স্কুলব্যাগ, পোশাক ও মাসিক উপবৃত্তি হিসেবে ১২০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ শিক্ষা কার্যক্রম তিন বছর পরিচালনার জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্লাসে ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। এক শিফটে তিন ঘণ্টা ক্লাসের জন্য তাদের মাসিক পাঁচ হাজার টাকা মাসিক বেতন দেওয়া হয়। স্কুলঘরের জন্য শহরে চার হাজার আর গ্রামে দেড় হাজার টাকা মাসিক ভাড়া দেওয়া হয়। আহসানিয়া মিশন, আরডি, আরএম, ইএডিওসহ ৫৫টি এনপিও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় ৭০টি করে স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে ২ হাজার ১০০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, সাক্ষরতার হার বাড়ানোর লক্ষ্যে কর্মসূচি অব্যাহত আছে। এক্ষেত্রে সামাজিক কারণে স্কুলের আনতে না পারা এবং ঝরে পড়া শিশুদের মূলধারার অবিকল পাঠ্যক্রমে লেখাপড়া করানো নতুন সংযোজন হচ্ছে। সেটি অব্যাহত আছে। বয়স্ক শিক্ষার কর্মসূচি শেষ হয়েছে সম্প্রতি। নতুন প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে। আশা করছি শিগগির বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

jagonews24

জানা গেছে, নিরক্ষরদের সাক্ষরতার আওতায় আনতে মৌলিক শিক্ষা সাক্ষরতা প্রকল্পের আওতাভুক্ত স্কুলগুলোতে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এসব স্কুলে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই মূলধারার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। স্কুলে নির্ধারিত ৩০ জন শিক্ষার্থীর কোটা পূরণে এক উপজেলার ছেলেমেয়েদের অন্য উপজেলার স্কুলে তালিকা তৈরি করে শিক্ষকরা বেতন ও বাড়িভাড়া আদায় করছেন।

শুধু তাই নয়, কোনো কোনো স্থানে রান্নাঘরে, বাড়ির বারান্দায়, গাছের নিচে এমনকি গোয়াল ঘরকেও স্কুলঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোথাও আবার কাগজ-কলমে স্কুল দেখালেও বাস্তবে তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ একরামুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, দুর্ভাগ্যজনক যে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করতে পারিনি। অদূর ভবিষ্যতে পারবো, সে লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এ ব্যর্থতার দায় পূর্বাপর সব সরকারের হলেও ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ দাবিদার বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ওপরই দায়টা বেশি পড়ে। বর্তমান সরকারের ঘোষণা ছিল, ২০১৭ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করবে। তারা সেটি করতে ব্যর্থ। সাক্ষরতা কার্যক্রম সংক্রান্ত যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় সেগুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতি থাকায় লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে।

jagonews24

তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতার আওতায় আনতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করতে যে টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন, তার অপরিমেয় ঘাটতি রয়েছে সব ক্ষেত্রে। উদাহরণ হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের হাজার হাজার পদ শূন্য থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা যায়।

তিনি জানান, দেশের ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২১ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদই শূন্য। সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা আরও বেশি। সে কারণে আমরা ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছি। অক্টোবরের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করে যোগদান দেওয়া হবে।

এমএইচএম/এমকেআর/এমএস



Advertiser