শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার ইউনিয়নের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের দোতলায় প্রায় ২০ বছর ধরে সুরেশ্বর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চলছে। এতে একদিকে বিদ্যালয়ের পাঠদান ও দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে সংকীর্ণ স্থানে পুলিশ সদস্যদেরও কাজে সমস্যা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রায় ২১ বছর আগে ঘড়িসার ইউনিয়নে নদীভাঙনে বেশকিছু বসতঘরসহ সুরেশ্বর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভবনটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ কারণে সেখানে আর কোনো নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভবন নির্মিত হয়নি। ওই সময় ঘড়িসার ইউনিয়নে ফাঁড়িটি স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে ১১১ নম্বর উত্তর হালইসার গোয়ালবাথান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের দোতলায় চারটি কক্ষে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তর হালইসার গোয়ালবাথান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে স্থাপিত হয়। তখন টিনশেড ভবন ছিল। পরে ২০০২ সালে আট কক্ষবিশিষ্ট দোতলা পাকাভবন নির্মাণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ২০০৩ সাল থেকে ওই বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটির দোতলা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে একদিকে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছে না, অন্যদিকে পুলিশ সদস্যরাও নানা দুর্ভোগে পড়েছেন। বিদ্যালয়ের ভবনের ফাঁড়ির ১২ পুলিশ সদস্য গাদাগাদি করে থাকছেন। এছাড়া আটক আসামিদের ফাঁড়ির ইনচার্জের রুমে গাদাগাদি করে রাখতে হচ্ছে।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলে, আমাদের বিদ্যালয়ে নৌ-পুলিশরা থাকেন। তাই শ্রেণিকক্ষ কম হওয়ায় ক্লাস করতে সমস্যা হয়। এছাড়া পুলিশের ভয়ে মাঝে মধ্যে ক্লাস করি না।
এ বিষয়ে সুরেশ্বর ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. আবু আব্দুল্লাহ বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রের মতো এখানে থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছি। ভবনটিও জরাজীর্ণ, জায়গাও কম। ফলে ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে যায়গা দেখছি। সেখানে ভবন হলে চলে যাবো।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি দোতলা ভবন, মোট আটটি কক্ষ আছে। দোতলা ব্যবহার করে নৌ-পুলিশ। প্রাক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি ক্লাস। তাই বিদ্যালয়ে কক্ষ সংকটে ভুগছি। সে কারণে, স্কুলে পাঠদান ও দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। নৌ-পুলিশ তাদের কার্যক্রম অন্য যায়গায় সরিয়ে নিলে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে।
তিনি আরও বলেন, স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণিকক্ষে নৌ-পুলিশ থাকার কারণে তাদের ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে চার কক্ষের নিচতলায় দুই পালায় স্কুলের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা গাদাগাদি করে থাকি। আমার কোনো কক্ষ নেই। এখানে ১৪৪ জন শিক্ষার্থী ও চারজন শিক্ষক আছেন। স্কুল ভবন থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নিতে পুলিশ প্রশাসনসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে অনেক বার বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এস এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ফাঁড়ি থাকলে স্কুলে পাঠদান ও দাপ্তরিক কাজে সমস্যা হয়। নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি সরানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন বলেন, আমি একমাস হলো শরীয়তপুরে যোগদান করেছি। স্কুলটির বিষয় জানলাম। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবো।
মো. ছগির হোসেন/এমআরআর/এএসএম