বৈশ্বিক মন্দায় বিভিন্ন দেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম। যে কারণে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে। আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়। যে কারণে কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে এগুচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে দেশের কোনো জমি পতিত না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি চাষাবাদে আগ্রহী করার জন্য কৃষকদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ, সার ও বীজ দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। চলতি রবি মৌসুমে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের ৮১ হাজার কৃষককে।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে (২০২২-২০২৩ সাল) বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার হেক্টর জমি। বোরো আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিন ক্যাটাগরিতে দেওয়া হচ্ছে প্রণোদনা। বোরো আবাদে দুই ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে ৭৩ হাজার কৃষককে। পাশাপাশি রবিশস্য উৎপাদনকারী আরও ৭ হাজার ৬৫০ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, চলতি রবি মৌসুমে বোরো ও রবিশস্যের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার রেকর্ড সংখ্যক প্রণোদনা দিচ্ছে। এতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
খাদ্য সংকট নিয়ে সর্তক বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আগামী বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশের পতিত আবাদ জমির প্রতিটি ইঞ্চি কাজে লাগাতে হবে খাদ্য উৎপাদনের জন্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বোরো উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকদের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল উফশী ও হাইব্রিড জাতের বীজ এবং সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। উৎপাদন বাড়াতে এসএল-৮ এইচ বীজ কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে চার হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ১৪০০ জন কৃষক। পটিয়া (কর্ণফুলীসহ) ১৩ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৩৭০০ জন কৃষক। আনোয়ারা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় সাত হাজার ৪৮০ হেক্টর জমি। প্রণোদনা পেয়েছেন ৪৫০০ জন কৃষক। চন্দনাইশে আট হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ২৬৫০ জন কৃষক। লোহাগাড়া উপজেলায় ১১ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৩০০০ জন কৃষক। সাতকানিয়ায় ১২ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৫১৫০ জন কৃষক।
বাঁশখালীতে ১৪ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৭৭৫০ জন কৃষক। মিরসরাই উপজেলায় ২১ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এর বিপরীতে প্রণোদনা পাচ্ছেন ১২৩০ জন কৃষক। ফটিকছড়িতে ২১ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রণোদনা পেয়েছেন ৬০০০ কৃষক। হাটহাজারীতে নয় হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৩৫০০ জন। রাউজানে ১১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রণোদনা পেয়েছেন ৩৪২০ জন কৃষক।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১৫ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৫৪৮০ জন কৃষক। সন্দ্বীপে ২৪ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ১০০ জন কৃষক। এ ধাপে ৪৮ হাজার কৃষকদের মধ্যে দুই কেজি করে হাইব্রিড বীজ দেওয়া হবে।
একই সঙ্গে ২৫ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে সার ও বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। প্রতিজন কৃষককে ১০ কেজি করে ডিএপি, ১০ কেজি করে এমওপি ও ৫ কেজি করে উফশী জাতের বীজ প্রদান করা হবে। এসব প্রণোদনা পাবেন মিরসরাইয়ে ৬৭৫ জন, ফটিকছড়িতে ৩১২৫ জন, হাটহাজারীতে ১৮০০ জন, রাউজানে ১৮০০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ২৮৭৫ জন, বোয়ালখালীতে ৭৫০ জন, পটিয়ায় ১৮০০ জন, কর্ণফুলীতে ৩৫০ জন, আনোয়ারায় ২২০০ জন, চন্দনাইশে ১৩৭৫ জন, লোহাগাড়ায় ১৫৫০ জন, সাতকানিয়ায় ২৭০০ জন, বাঁশখালীতে ৪ হাজার জন।
তাছাড়া রবিশস্য উৎপাদনকারীদের মধ্যে মিরসরাইয়ে ১২১৫ জন, সীতাকুণ্ডে ৬৩০ জন, ফটিকছড়িতে ৭৪৫ জন, হাটহাজারীতে ৫২৫ জন, রাউজানে ৫৮৫ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৫১০ জন, বোয়ালখালীতে ৪০৫ জন, পটিয়ায় ৩৩০ জন, কর্ণফুলীতে ২১০ জন, আনোয়ারায় ৩৬০ জন, চন্দনাইশে ২৮০ জন, লোহাগাড়ায় ৪৮০ জন, সাতকানিয়ায় ৪৬৫ জন, বাঁশখালীতে ৩৬৫ জন এবং সন্দ্বীপে ৫৪৫ জনকে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হবে।
ইকবাল হোসেন/এমআইএইচএস/জেআইএম