# স্বামী-স্ত্রীসহ গ্রেফতার ৩
# মাদক পরিবহনের কৌশল হিসেবে ব্যবহার হতো নারী সদস্য
# হেরোইন বিক্রির টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করতো শাকিব
# প্রতিটি চালান পরিবহনের জন্য বহনকারী পেতেন ১৫-২০ হাজার টাকা
সীমান্তবর্তী এলাকা হয়ে নদীপথে প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচ কেজি হেরোইন আনা হতো। এ চক্রের নারী সদস্যদের মাধ্যমে সেসব হেরোইন পৌঁছে দেওয়া হতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খদ্দেরদের হাতে। এমনই এক চক্রের হোতা শাকিবসহ তিন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন।
আরও পড়ুন: সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার হেরোইনসহ গ্রেফতার ৩
গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের অন্যতম হোতা মো. শাকিবুর রহমান ওরফে শাকিব (৩৫), তার স্ত্রী মোছা. রাজিয়া খাতুন (৩৩) ও মোছা. সেলিনা খাতুন ওরফে শিরিনা (৩৮)। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১২ যৌথ অভিযানে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে তাদের গ্রেফতার করে।
শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, চক্রটি পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে নদীপথে প্রতি মাসে ৪-৫ কেজি হেরোইন নিয়ে আসতো। মাদক পরিবহনের কৌশল হিসেবে শাকিব নারী সদস্যদের ব্যবহার করতো। তাদের মাদক কারবার চক্রে ১০-১২ জন সক্রিয় নারী সদস্য রয়েছে।
আরও পড়ুন: জানুয়ারিতে ১৩০ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য ও মাদক জব্দ
চাহিদা অনুযায়ী বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিনিয়ত ৫০০/৬০০ গ্রাম করে হেরোইন বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দিতো। প্রতিটি চালান পরিবহনের জন্য বহনকারীকে ১৫-২০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। চালানের পরিমাণ বেশি হলে শাকিব বিভিন্ন সময় তার নিজের মোটরসাইকেলযোগে পরিবহন করতো। এই চালানে তিন কেজির বেশি হেরোইন থাকায় শাকিব নিজেই তা বহন করছিলেন।
র্যাব মুখপাত্র আরও বলেন, শাকিব তার নওগাঁর বাসায় আরও দুই কেজি হেরোইন থাকার ব্যাপারে তথ্য দেয়। পরে তার বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তার স্ত্রী গ্রেফতার সেলিনা খাতুনের কাছ থেকে দুই কেজি হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, শাকিব আগে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল এবং এলাকায় তার বিরুদ্ধে একাধিক চুরির অভিযোগ রয়েছে। গত প্রায় দুই বছর ধরে সে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। সে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তার ব্যবসায়িক সহযোগীর মাধ্যমে হেরোইন সংগ্রহ করে প্রথমে নিজের বাড়িতে সংরক্ষণ করতো।
পরবর্তীকালে চাহিদা অনুযায়ী বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করতো। বিভিন্ন সময় সে নিজের মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন স্থানেও এসব মাদকের চালান পরিবহন করতো।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে দেড় হাজার কোটি টাকার চোরাচালান দ্রব্য জব্দ
এছাড়াও চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সময় যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ এবং কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক কারবারিদের কাছে হেরোইন সরবরাহ করতো শাকিব। হেরোইন বিক্রির টাকা সংগ্রহ করা হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতার রাজিয়া খাতুন শাকিবের স্ত্রী। সে তার স্বামীর মাদক কারবারের সহযোগী। পাশর্বর্তী দেশ থেকে আনা হেরোইনের একটি অংশ শাকিব নিজ বাড়িতে তার স্ত্রীর হেফাজতে রাখতো। বিভিন্ন সময় আস্থাভাজন মাদক কারবারিরা হেরোইন সংগ্রহ করতে এলে সেলিনা তাদের হেরোইন সরবরাহ করতো।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার সেলিনা খাতুন ওরফে শিরিনা শাকিবের হেরোইন চক্রের অন্যতম নারী সহযোগী। সে প্রায় এক বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার শাকিবের সঙ্গে মোটরসাইকেলে বিভিন্ন স্থানে হোরোইন সরবরাহ করেছে সেলিনা। বৃহস্পতিবার রাতেও গাজীপুর ও সাভারের বিভিন্ন স্থানে হেরোইন সরবরাহ করার জন্য নওগাঁ থেকে শাকিবের সঙ্গে রওনা হয় সে। পথে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে র্যাবের হাতে দুজনই গ্রেফতার হয়।
টিটি/এমকেআর/এমএস