মোস্তফা কামাল সুমন: ইংরেজ শাসন আমলে ভারত উপমহাদেশে থানা সৃষ্টির প্রাক্কালে গোবিন্দগঞ্জ থানা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৭৯৩ সালে গঠিত এই গোবিন্দগঞ্জ থানা আজকের মতো এত ছোট ছিল না তার রুপ। পাশ্ববর্তী উপজেলা পলাশবাড়ী ও সাঘাটা নিয়ে গঠিত হয়েছিল সেই সময়ে গোবিন্দগঞ্জ থানা। ১৭৯৩ সালে ৩২৭ বর্গ মাইল এলাকা নিয়ে গঠিত থানা ১৯৮১ সালে এসে ১৭৬ বর্গ মাইল এলাকা নিয়ে বর্তমান রুপে অবস্থিত। ১৯০৩ সালে সাঘাটা ও ১৯১৯ সালে পলাশবাড়ী থানা গঠনের আগ পর্যন্ত এই দুই থানা গোবিন্দগঞ্জ থানার এলাকার সাথেই যুক্ত ছিল। গোবিন্দগঞ্জ থানা প্রশাসনিক পূর্ণবিন্যাসের কারনে কখনো থানা আবার কখনো উপজেলা নামে নামকরণকৃত হলেও মুল নাম গোবিন্দগঞ্জ ঠিক থেকে গেছে।
গোবিন্দগঞ্জ নামটি কিভাবে আমাদের হলো তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবুও ইতিহাসের বিভিন্ন উৎস থেকে গোবিন্দগঞ্জ নামকরণের যে তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায় তা তুলে ধরার নিমিত্তেই এই লেখার প্রয়াস। সাঁওতালী গ্রন্থ সত্যংশিবং সনাতন পুরাণে গোবিন্দগঞ্জের পাশ্ববর্তী প্রাচীণ পৌন্ড্রবর্ধন রাজ্যে ১০ জন রাজা স্বাধীন ভাবে রাজত্ব করছিল বলে উল্লেখ আছে। তাদের মধ্যে রাজা গোবিন্দ নামের একজন রাজা ছিল। জনশ্রুতি আছে তার নামেই গোবিন্দগঞ্জ নামকরণ হয়েছে। যদিও এই জনশ্রুতি কে মেনে নেয়া কঠিন। কারণ, জনশ্রুত রাজা গোবিন্দ ঐতিহাসিক কি না তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের সন্দেহ আছে।
বর্তমান পৌর শহরে পুরাতন গোবিন্দগঞ্জ নামে খ্যাত এলাকার মৌজার নাম গোবিন্দপুর ও চক গোবিন্দ। চক গোবিন্দ মৌজায় মুঘল আমলের পূর্বে নির্মিত বিখ্যাত গোবিন্দ মন্দির ছিল। সেই মন্দিরে প্রতিদিন বিগ্রহ দর্শন ও পুজা দেয়ার জন্য শত শত লোক আসতো। কালক্রমেই এই মন্দিরকে কেন্দ্র করেই গোবিন্দগঞ্জ নামকরণ করা হয় বলে অনেকেই ধারণা করেন। গোবিন্দগঞ্জ কৃষি শষ্যে প্রাচীনকাল থেকেই প্রসিদ্ধ ছিল। বর্তমানে মৃত করতোয়া প্রাচীনকালে প্রমত্ব করতোয়া ছিল। পুরাতন বন্দর এলাকায় এই করতোয়া নদীর তীরে মুঘল আমলে বিশাল বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠে। মুসলিমরা ভারত বর্ষে আগমনের পর ভারতে আরবি ও ফার্সী শব্দের ব্যবহার শুরু হয়। গঞ্জ একটি ফার্সী শব্দ। হাট, বাজার, গোলা, বন্দর, শষ্য ক্রয় কেন্দ্র প্রভৃতি নামে গঞ্জ শব্দটি ব্যবহার হয়। গোবিন্দগঞ্জ নামের সাথে গঞ্জ যুক্ত থাকায় মুঘল আমলের বাণিজ্য কেন্দ্র স্থলের দুটি মৌজার নাম চক গোবিন্দ ও গোবিন্দপুর এর গোবিন্দ এর সাথে গঞ্জ যুক্ত হয়েই গোবিন্দগঞ্জ নামকরণ হয় বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন।
গোবিন্দগঞ্জের অপর নাম গোলাপবাগ। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের থানা মোড় চার মাথা থেকে দক্ষিণ পশ্চিম এলাকা গোলাপবাগ নামে পরিচিত। বৃটিশ শাসর কালে বর্ধনকোটের জমিদার শ্যামকিশোর বর্তমান বাজার এলাকায় একটি বিশাল গোলাপ বাগান তৈরি করেন। সেই গোলাপ বাগান কালক্রমে গোলাপবাগ নাম ধারণ করেছে। গোবিন্দগঞ্জ নামকরণের নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ থাকলেও গোবিন্দগঞ্জ ইতিহাস: অতীত ও বর্তমান গ্রন্থের লেখক গোপাল সরকারের মতে গোবিন্দ মন্দির থেকেই গোবিন্দগঞ্জ নামকরণ হয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। এই লেখার লেখক মোস্তফা কামাল সুমন সহ গোবিন্দগঞ্জের অনেক গুনীজন ও বয়জ্যেষ্ঠ্যরা গোপাল সরকারের মতের সমর্থনে মনে করেন, প্রাচীন গোবিন্দ মন্দির থেকে চক গোবিন্দ ও গোবিন্দপুর নামের দুটি মৌজার নাম হয়। পরবর্তীতে মুসলিম শাসকগণ ভারত বর্ষে আগমনের পরে বিধৌত করতোয়া নদীর যেখানে বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তোলে সেই মৌজা চক গোবিন্দ ও গোবিন্দপুর নামের গোবিন্দ এর সাথে গঞ্জ যুক্ত হয়েই গোবিন্দগঞ্জ নামের সৃষ্টি হয়।
লেখক, প্রশাসক ও সম্পাদক, গোবি খবর
প্রথম প্রকাশ: ২ এপ্রিল ২০১৬ খ্রি.
The post কিভাবে গোবিন্দগঞ্জ নামটি আমাদের হলো appeared first on গোবি খবর.