আলমগীর বাবু, চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের দেবপুর এলাকায় সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এক কোটি সতের লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১০ ফুট পিচঢালাইসহ উভয় পাশে ৩ফুট করে রাস্তা প্রসস্তকরণে স্থানীয়দের বাড়ির প্রাচির বা জমির অংশ সড়কের বরাবরে দখল নিতে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ঠ্যাঙ্গা জাকিরের! বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি ভুক্তভোগী দেলোয়ার শেখ পরিবারের। অবশ্য ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় ফেসবুকে পুনরায় স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ওই পরিবারটি। বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষোভ ও হতাশ স্থানীয়রা। আবার কেউ কেউ দাবি করেছেন হুমকি-ধামকি দিয়ে ও টাকার বিনিময়ে অভিযোগটি ফিরিয়ে নিয়েছে দেলোয়ার শেখ পরিবারের পক্ষ থেকে।
ভুক্তভোগী দেলোয়ার শেখের ছেলে তারেক আহমেদ রাজু তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিতে ‘‘ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আলহাজ¦ ডাঃ দীপু মনি এমপি আপা, জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু ভাইসহ জেলা আওয়ামীলীগের সকল নেতৃবৃন্দ ও ৫নং রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দসহ সকল সাধারণ জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ” স্ট্যাটাসটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সংবাদকর্মীদের নজরে আসলে গত ২৬জুন’২১ খ্রিঃ (শনিবার) বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে যান সংবাকর্মীরা। স্ট্যাটাসটিতে আরো যা উল্লেখ ছিল তা হুবুহ তুলে ধরা হলো ‘‘ সবিনয়ে আপনাদের জানাচ্ছি যে মধ্য দেবপুর টাওয়ারা এর রাস্তা হতে রেললাইন পর্যন্ত ৯১০ ফিট রাস্তা পাকা করণের কাজে বিশাল অনিয়ম এবং দূর্নীতি হচ্ছে এর মুল হোতা সাহাদাত হোসেন জাকির। গতকাল দুপুরে রাস্তার কাজের অজুহাতে আমার মাকে এসে প্রস্তাব করেন যে যদি আপনারা আমাকে ১,০০,০০০ (এক লক্ষ টাকা দেন)তাহলে আপনাদের সম্পদ ও গাছ গাছালির কোন প্রকার ক্ষতি না করেই রাস্তা হবে কিন্তু তাৎক্ষনিক ভাবে আমার মা তার দেওয়া প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানায় এবং বলে রাস্তার প্রয়োজনে আপনাদের যতটুকু জায়গার গাছ উচ্ছেদের প্রয়োজন ঠিক ততটুকুর গাছ আমাদের সরিয়ে নেয়ার সময় দিন।
তার প্রস্তোবে রাজি না হওয়ায় তাৎক্ষনিক আমাদের কোন সময় দেওয়া হবে না বলেই তিনি (জাকির) ক্ষুব্ধ হয়ে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, যেখানে রাস্তা প্রসস্ত করার জন্য ৩ফিট জায়গা খালি করার কথা সেখানে আমাদের প্রায় ৪০ ফিট চওড়া ফলের ও বিভিন্ন কাঠ গাছের বাগান বেকু দিয়ে সমূলে পিশে পেলে, এ ব্যাপারটি আমাদের স্থানীয় চেয়ারম্যান (আল মামুন পাটোয়ারিকে) বারংবার জানানো হলেও উনি বিভিন্ন ভাবে অজুহাতে এবং অত্যন্ত শুকৌশলে ব্যাপারটি এড়িয়ে যায়, ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমাদের অভিভাবক তার কাছে গিয়ে যদি আমরা বিচার না পাই তাহলেআমরা সাধারণ জনগণ কার কাছে যাবো? এই প্রশ্ন আমারা সর্বস্তরের মানুষের কাছে? এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেলোয়ার শেখের সাথে কথা বললে তিনি জানান রাস্তা প্রসস্তকরণে আমাদের বাগানটি কেটে পরিস্কার করতে হবে , যদি তাদেরকে ১লাখ টাকা দিই তাহলে আমাদের কোন কিছুর ক্ষতি হবেনা। এক লাক টাকা কে কার কাছে চেয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা স্ত্রীর কাছে চেয়েছে কন্টেক্টার জাকির এবং আমার স্ত্রী টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা আমার কাঠ ও ফল বাগানের সবগুলো গাছ কেটে ফেলে। প্রতিবাদ করায় আমি ও আমার পরিবারের ওপর হুমকি আসে।
এমনকি পরদিন দু’জন পুলিশ পাঠিয়ে আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এ ব্যাপারে দেলোয়ার শেখের ছেলে তারেক আহমেদ রাজু যিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জুলুমের বিচার বিচার প্রার্থনা করেছেন, তার সাথে কথা হলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে উল্টো তার বাবাকে বকাঝকা দিয়ে সংবাদকর্মীদের সাথে কথা না বলার জন্য বারণ করে। তারেক আহমেদ রাজু সংবাদকর্মীদের জানান, আমাদের বিষয়টি চেয়ারম্যান সুরাহ করে দিবে বলে আমাদেরকে আশ^স্ত করেছেন অতএব আমরা আর এবিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। যদি চেয়ারম্যানের বিচারটা আমরা ঠিক না পাই তাহলে পরবর্তী প্রদক্ষেপ নিব, তখন আপনাদের ডাকবো। আপনাদের কাছে কন্টেক্টার ১ লাখ টাকা দাবি করেছে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন এক লাখ টাকা হবে না আরও কম বেশি হবে। কার কাছে চেয়েছিল বললে প্রথমে বলে ভাই আমরা এটানিয়ে একটা সমাধানে যাচ্ছি। তবুও সংবাদকর্মীদের একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে এক পর্যায়ে অকপটে স্বীকার করে তার মায়ের কাছে। অন্যদিকে দেলোয়ার শেখের শ্যালক দুলাল তার ভাগ্নে তারেক আহমেদ রাজুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনেএকাধিকবার কল দিয়ে সংবাদকর্মীদের তথ্য না দিতে বলে।
এক পর্যায়ে তিনি সংবাদকর্মীদের সাথেও রাজুর মোবাইল ফোনে কথা বলে অনুরোধ করে আমরা এটা সমাধানে যাচ্ছি বিকেলে, চেয়ারম্যান যদি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বিচার না করে তাহলে আপনাদের ডাকবো।এদিকে সরেজমিনে গিয়ে আরও লক্ষ করা গেছে, ওই সড়কটি নির্মাণে স্থানীয়দের ফসলি জমি থেকে ভ্যাকু দিয়ে মাটি কেটে রাস্তায় উঠিয়েছে। এ নিয়ে জমির মালিকারা প্রতিবাদ করলে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে ঠ্যাঙ্গা জাকির। যারাটাকা দেয় তাদের জমিতে ভ্যাকু নামে না যারা টাকা দিতে পারেনা তাদের জমিতে ভ্যাকু নামিয়ে মাটি কেটে রাস্তায় উঠায় এমনও অভিযোগ করেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। ঠ্যাঙ্গা জাকির অভিনব কায়দায় যে তাকে টাকা দিয়েছে তার সম্পদ বিন্দুমাত্র ক্ষতির উর্দ্ধে রেখে যারা তাকে টাকা দেয়নি তাদের সম্পদ জোরজুলুম করে ২ফিট জায়গার প্রয়োজন থাকলেও ৫-৭ ফুট ভিতরে রাস্তা ঢুকিয়েদিয়ে স্থানীয়দের সাথে অমানবিক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আবার কোথাও নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে গাইড ওয়াল নির্মানের পর তা ভেঙ্গে পড়েছে। ওইস্থানে গাইড ওয়াল পুনঃনির্মাণ না করে পুকুরের জায়গা আরো বেশি দখল করে গাইড ওয়াল নির্মাণ করার ব্যাপক অভিযোগ ঠ্যাঙ্গা জাকিরের বিরুদ্ধে। রাস্তা প্রসস্ত করণে দু’পাশে বাড়ানোর কথা থাকলেও মোটা অংকেরটাকা বিনিময়ে সেটি একপাশ দিয়েই বাড়ানো হচ্ছে।
এতে করে ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে অসহায় জনগোষ্ঠি। এছাড়াও ঠিকাদার ঠ্যাঙ্গা জাকির গত ২৫ জুন’২১ খ্রিঃ(শুক্রবার) বিকেলে মনিরা আল খালিদ মাহিলা মাদ্রাসার বিপরীত পাশ কাজীর বাড়ির হাফেজ আব্দুল লতিফ কাজি ও হাফেজ মোঃ মোখলেছুর রহমানের বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ভেঙ্গে দেয়। যদিও রাস্তাটি মরহুম এডভোকেট তোফায়েল হোসেন তাঁর নিজস্ব সম্পত্তির ওপর দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তা দেয়। কিন্তু এখন ওই রাস্তাটি মরহুম তোফায়েল হোসেনের দেয়া সম্পত্তির ওপর দিয়েরাস্তাটি না নিয়ে হাফেজ আব্দুল লতিফ কাজির পৈত্রিক সম্পত্তির ওপর দিয়ে তাদের বসত বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে ঠ্যাঙ্গা জাকির এমনতাই জানালেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়াও একই এলাকার সেলিম সাদু বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে দেয়াসহ ওই সড়কে অবস্থিত সালমাসুলতানার পুকুরে গাইড ওয়াল নির্মানে নামে তার পুকুরের প্রায় অর্ধেক সম্পত্তি মাঝামাঝি গাইড ওয়াল নির্মান করেন ঠ্যাঙ্গা জাকির। অন্যদিকে ওই সড়কটি নির্মাণ কাজ বেকৃ দিয়ে খোড়াতে গিয়ে সড়ক অবস্থিত গ্যাস পাইপগুলোর সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়। এতে করে পুরো এলাকায় জনদুর্ভোগ চরমে।
প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অত্র এলাকার লোকজন বর্তমানে গ্যাস বিহীন তাদের রান্না বান্নার কাজ করে যাচ্ছেন। এব্যাপারে ৫নং রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মির্জার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ওই রাস্তাটি উদ্বোধন করার সময় আমাকে জানানো হয়নি। তাছাড়া ওইসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না জানিও না। তবে ওই দেলোয়ার শেখের বাগান বিনষ্টের কথা শুনেছি এবং সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন লিটু বলেন,ওই ইউনিয়নে যা কিছু ঘটে সব চেয়ারম্যানের ইশারায় ঘটে। ওই জাকির মানুষের সাথে ব্যাপক জুলুম করছে তার নামে অনেক অভিযোগ শুনেছি এখন শুনি। এ ব্যাপারে ঠ্যাঙ্গা জাকিরের সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তারা আমাদের বিরুদ্ধেবিভ্রান্তিমুলক তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিয়েছে আবার তারা আমার আর চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে পুনঃরায় স্ট্যাটাস দিয়েছে আপনি কি সেটা দেখেছেন? বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গা ও ফসলি জমিতে ভ্যাকু দিয়ে মাটি কাটার বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যাদের সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গা হয়েছে তারা সরকারি রাস্তায় দখল করেছিল এতোদিন। আর ভ্যাকু দিয়ে মাটি কাটা ছাড়ার উপায় কি আমি মাটি কোত্থেকে এনে দিবো। কাজের হিসেবে মাটি ধরা আছে কিনা জানতে চাই তিনি বলেন না,মাটি ধরা নাই। বিভিন্ন মানুষের কাছে টাকা নিয়েছেন কথাটি কি সত্যি বললে তিনি তা অস্বীকার করেন। গ্যাস লাইনের বিষয়টি বিচ্ছিন্নের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা গ্যাস কোম্পানী বুঝবে আমার কিছুই করার নাই।