শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

ইটভাটার চুল্লিতে ঝুঁকিমুক্ত নয় পরিবেশ ও শিশু

মো. মেহেদী হাসান সজীব

একটি সুন্দরতম দিনের শুরুটা যদি চমৎকারভাবে করা যায়, তাহলে দিনের পুরোটা সময় বেশ ফুরফুরেভাবেই কাটানো যাবে—এটি খুবই সহজ সমীকরণ। কিন্তু দিনের শুরুতে প্রভাতের আলো ফুটে ওঠার আগেই যদি সোনাঝরা মিষ্টি রোদের পরিবর্তে দেখা মেলে জ্বলন্ত চুল্লির বিষাক্ত ধোয়ার; তখন পুরো দিনটা কেমন কাটবে আপনার? এটি নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না, সকালের এমন নেতিবাচক সূচনা পুরো দিনের তুমুল বিরক্তিবোধের জন্য যথেষ্ট।

পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, আমাদের দেশে ৭ হাজারের বেশি ইটখোলা বা ইটভাটা আছে। আর এই ৭ হাজার ইটভাটায় কর্মরত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। ১০ লাখের বেশি মানুষ যদি সরাসরি ইটভাটায় কর্মরত থাকে, তাহলে এই ১০ লাখ পরিবারের অন্য সদস্য সংখ্যা মিলিয়ে আরও বেশ কিছু মানুষদের প্রতিদিনের সকালটা শুরু হয় জ্বলন্ত চুল্লির বিষাক্ত ধোয়া দেখতে দেখতে। এমনকি এর নেতিবাচক প্রভাব প্রত্যক্ষ করার মধ্য দিয়ে।

আপনি আমি যখন এক কাপ কফি কিংবা চা হাতে একটি সুন্দরতম দিনের সূচনার অপেক্ষায়; ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিকারক জেনেও বিষাক্ত চুল্লির দিকে ছুটছে। জীবন এবং জীবিকা তাদের বাধ্য করছে এমন ক্ষতিকারক পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে। তরুণ-যুবক থেকে শুরু করে এই সংখ্যায় যুক্ত আছে অগণিত কোমলমতি শিশুও।

একটি সুন্দরতম সকাল আপনার আমার জন্য যতটা জরুরি, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিশুদের জীবনে। কোমলমতি শিশুদের যখন বিষাক্ত ধোয়ার নেতিবাচক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়; তখন তাদের জন্য এর চেয়ে বড় ক্ষতিকারক বিষয় আর হতে পারে না।

পরিসংখ্যান আরও জানান দেয়, ইট উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। বছরে প্রায় ৫ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন টন কয়লা ইটখোলায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে ইটখোলাগুলো থেকে নির্গত দূষিত উপাদানের প্রাদুর্ভাবে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

গবেষণায় দেখা যায়, বছরে প্রায় ১৫ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড ইটখোলা থেকে বায়ুমণ্ডলে যোগ হচ্ছে। বিভিন্ন জার্নালের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বড় কারণ হচ্ছে ইটভাটা।

যে ইটভাটার নেতিবাচকতা নিয়ে এত এত গবেষণা এবং বিভিন্ন সমীকরণ দিয়ে বোঝানোর উদ্যোগ নেওয়া। দিন শেষে সমস্যা সমস্যাই থেকে যায়। চুল্লির আলোয় দিন-রাত এক হলেও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিতই থেকে যায় এখানকার কোমলমতি শিশুরা। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সন্ধানে পরিবারের সঙ্গে শিশুরাও নেমে যায় ইটভাটার কাজে।

যে শিশুর একটি চমৎকার আনন্দঘন শৈশব কাটানোর কথা ছিল; সেই শিশুটি চমৎকার মিষ্টি শৈশবের পরিবর্তে পাচ্ছে বিষাক্ত ধোয়ার দুঃখজনক উপস্থিতি। ইটভাটার গণ্ডির মধ্যে বেড়ে ওঠা কোমলমতি লাখো শিশুর জীবন এমন করুণ দুর্ভাগ্যের বেড়াজালে বন্দি। এমন দুঃখজনক বন্দিত্বের দুর্দশা থেকে কবে নাগাদ মুক্তি মিলবে তাদের—এর উত্তর জানা নেই কারো।

লেখক: কথাবন্ধু ও মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত।

এসইউ/এমএস



Advertiser