শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

ট্রলারডুবি: একমাত্র উপার্জনক্ষম মোমেনাকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

মোমেনা বেগমের বয়স ৫৭ বছর। কর্মরত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের গভর্নমেন্ট মডেল গার্লস হাই স্কুলের এমএলএসএস (অফিস সহায়ক) পদে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। কিন্তু পুরো পরিবারকে অকূলে ভাসিয়ে অকালেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো তাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগরে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহতদের একজন এই মোমেনা বেগম।

ঘটনার দিন গতকাল শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে স্বামী আবু সাঈদের সঙ্গে অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগরে। বিকেলে বাড়িতে ফেরার পথে বালুবোঝাই ট্রলারের সাথে ধাক্কা লেগে যাত্রাবাহী ট্রালারডুবির ঘটনায় প্রাণ হারান মোমেনা। তার স্বামী বৃদ্ধ আবু সাঈদ প্রাণে বেচেঁ গেছেন।

শনিবার (২৮ আগস্ট) সকালে দক্ষিণ পৈরতলায় নিজ বাড়ির পাশে কবরস্থানে মোমেনার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

নিহতের ছোট ছেলে ফাহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এক আত্মীয়কে দেখে ফেরার পথে নৌ দুর্ঘটনায় মা মারা গেছেন। বাবা প্রাণে বেঁচে গেছেন। চোখের সামনে স্ত্রীর মৃত্যু দেখে বাবা বাকরুদ্ধ।’

মাকে হারিয়ে দিশেহারা সন্তান ফাহিম আরও বলেন, ‘আমার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। আমরা তিন ভাই ও এক বোন। মায়ের চাকরির বেতনে যে টাকা আসে, তা দিয়েই আমাদের সংসার চলতো। দীর্ঘদিন তিনি গার্লস হাই স্কুলে চাকরি করেছেন। আর সাড়ে তিন বছর পর তিনি অবসরে চলে যেতেন। আমাদের এই সংসার তার নিজ হাতে গড়া। ঘরে বিয়ের উপযুক্ত একমাত্র বোন রয়েছে। এখন কী করবো আমরা, ভেবে পাচ্ছি না। বড় ভাইটি টাইলস ফিটিংয়ের কাজ শিখছেন। আমি নিজেও বেকার।’

এদিকে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মোহাম্মদ হাসান শিশু নাশরার মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জ থেকে উদ্ধারকাজ চালাতে দমকল বাহিনীর ডুবুরির দল রাতে এসে যোগদান করে। রাত ২টা পর্যন্ত তারা অভিযান চালিয়ে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে পরে সাময়িক বন্ধ রাখে। ছয় ঘণ্টা বিরতির পর শনিবার সকাল ৮টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। উদ্ধারকাজ শুরুর দুই ঘণ্টা পর এক শিশুর মরদেহের সন্ধান পায় ডুবুরি দল।’

এর আগে গতকাল শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার লইছকা বিলে আনন্দবাজার ঘাটগামী যাত্রীবাহী একটি ট্রলারের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবোঝাই ট্রলারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে যাত্রীবাহী ট্রলারটি উল্টে যায়। এতে ট্রলারটিতে থাকা প্রায় ৭০ জনের মতো যাত্রীর সবাই নদীতে পড়ে যায়। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত ২২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এমকেআর/এএসএম



Advertiser