নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত সড়কটির বেহাল দশা। ছোট বড় অসংখ্য গর্তে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে ইলিশ মাছের জন্য চেয়ারম্যান ঘাটে যাওয়া শত শত গাড়িকে। এতে বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে ইলিশ ব্যবসায়ীদের। এছাড়া সড়কে চলাচল করা যাত্রী-পথচারীদেরও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
খোঁজ জানা গেছে, সোনাপুর থেকে বয়ারচর চেয়ারম্যান ঘাটের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। এরমধ্যে ১৬ কিলোমিটার রাস্তাই খানাখন্দে ভরা। যার মধ্যে ১০ কিলোমিটার সুবর্ণচর ও বাকি ছয় কিলোমিটার হাতিয়ার অংশে।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সুবর্ণচরের চরওয়াপদা ইউনিয়নের আল আমিন বাজারে গেলে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিনেও সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় চরম দুর্ভোগের কথা জানান।
ব্যবসায়ী মো. ইকবাল হোসেন জানান, রাস্তা খারাপের কারণে তাদের ওই বাজারে কোনো গাড়ি যেতে চায় না। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও মালামাল নিতে পারছে না তারা। এছাড়া গেলে অনেক সময় গাড়ি এবং মালামাল দুটোই নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, কিছুদিন আগে চৌমুহনী থেকে গ্লাস নেওয়ার সময় তার তিনটি গ্লাস ভেঙে গেছে। এতে তার নয় হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তাদেরকে মালামাল পরিবহন করতে হয়।
মাদরাসা ছাত্র মো. নাঈম জানান, আগে তাদের মাদরাসার ভ্যানগাড়ি থাকলেও রাস্তা খারাপের কারণে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। রিকশা ভাড়াও প্রচুর তাই দীর্ঘ পথ হেঁটে মাদরাসায় যেতে হয়।
চরওয়াপদা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ওমর ফারুক জানান, রাস্তায় গাড়ি চালানো দায় হয়ে পড়েছে। রাস্তার বেহাল দশার কারণে ১৩-১৪ কিলোমিটার বেশিদূর ঘুরে চেয়ারম্যান ঘাট যেতে হয়। তাই ৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা দিতে হয়।
আট কপালিয়ার ইলিশ ব্যবসায়ী জমিদার ব্যাপারী বলেন, চেয়ারম্যান ঘাটের রাস্তা খারাপের কারণে বড় গাড়ি ঘাটে আসতে পারে না। ছোট গাড়ি আসলেও ভাড়া কয়েকগুণ বেশি গুনতে হয়। এতে মাছের দামও অনেক বেড়ে যায়।
হেঞ্জু ব্যাপারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাতিয়ায় থেকে ইলিশ খাতে সরকার লাখ লাখ টাকা পেলেও এখানকার রাস্তা সংস্কারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর উদাসীন। এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি কামনা করি।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির হরণী ইউনিয়নের সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন শাহরাজ বলেন, রাস্তা খারাপের অজুহাত দেখিয়ে জেলেদেরকে ইলিশ মাছের মূল্য কম দেওয়া হয়। রাস্তা ভালো হলে বড় ব্যবসায়ীরা মাছ নিতে আসলে বাজার আরও ভালো পাওয়া যেত।
হাতিয়া উপজেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আখতার হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, চেয়ারম্যান ঘাটে আসার একমাত্র সড়ক পথটি খারাপ হওয়ায় অন্য জেলা থেকে ইলিশ মাছে নিতে গাড়িগুলো আসতে চায় না। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে অনেকসময় লোকসান গুণে ব্যবসায়ীরা মাছ সরবরাহ করছে।
চরওয়াপদা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আবদুল মানান জাগো নিউজকে জানান, এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি অতি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। তিনি পরিষদে বসে প্রথমেই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরে আনবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদের (সওজ) নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহাদ উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তাটি এলজিইডি থেকে সওজ বিভাগে নতুন হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) তৈরি করছি। সেটি পাঠানোর পর পাস হয়ে আসলে সড়কটি সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ইকবাল হোসেন মজনু/এসজে/এমএস