বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

বিনা দোষে জেল খাটা নিহত মিনুর দুই আইও হাইকোর্টে

প্রায় ১৫ বছর আগে চট্টগ্রামে এক নারী গার্মেন্টসকর্মী হত্যার ঘটনায় করা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তারের হয়ে জেল খাটা মিনুর গাড়িচাপায় মৃত্যুর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং আটক কুলসুমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির নথিসহ হাইকোর্টে উপস্থিত হয়েছেন দুই তদন্ত কর্মকর্তা (আইও)।

বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকালে হাজির হওয়ার নির্ধারিত দিনে তারা সশরীরে আদালতে উপস্থিত হন। এ বিষয়ে আজ হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চে শুনানিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরাও যুক্ত রয়েছেন। গত ১৬ আগস্ট দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে নথিসহ ০১ সেপ্টেম্বর হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

আদালতে মিনুর পক্ষে থাকছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

এর আগে গত ৩১ মার্চ ঘটনাটি উচ্চ আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এরপর ৭ জুন হাইকোর্ট মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেন।

গত ১৬ জুন বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু। তবে গত ২৮ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে বায়েজিদ ভাটিয়ারী লিংক রোডের মহানগর সানমার গ্রিনপার্কের বিপরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মিনু।

এ ঘটনায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ২৯ জুন একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। আর খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত কুলসুমকে ২৯ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রতারণার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় কুলসুমের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তিনি জবানবন্দিও দেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুবায়ের মৃধা।

জানা যায়, একটি হত্যা মামলায় আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানাঅনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে। আর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেল খাটছেন মিনু। বিষয়টি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান আদালতের নজরে আনেন।

গত ২২ মার্চ সকালে অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে পিডব্লিউ মূলে মিনুকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে জবানবন্দি শুনে এ মামলার আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় মিনুর উপ-নথি ২৩ মার্চ হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ মামলায় মিনুর পক্ষে শুনানি করেছিলেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টসকর্মী কোহিনূর আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর রহমতগঞ্জে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কোহিনূর আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন গার্মেন্টসকর্মী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এরপর থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। মামলায় পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে এটি হত্যাকাণ্ড বলে প্রতিবেদন দিলে অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।

এরমধ্যে এক বছর তিন মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান কুলসুম।

মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ওই হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। সাজার পরোয়ানামূলে কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি মিনু গত ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান।

এদিকে গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান নারী ওয়ার্ড পরিদর্শনকালে মিনু কোনো মামলার আসামি নয় বলে জানতে পারেন। পরে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়।

কারাগারের সংরক্ষিত হাজতি রেজিস্ট্রার অনুসারে আসামি কুলসুম আক্তার গত ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর কারাগারে আসেন। তিনি কারাগারে প্রায় এক বছর তিন মাস ছিলেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালত ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জামিন মঞ্জুর করেন। ওই দিন কারাগার থেকে মুক্তি পান কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এর পরে তিনি দুর্ঘনায় মারা যান। যেটি নিয়ে সৃষ্টি হয় ধুম্রজাল।

এফএইচ/এমকেআর/এমকেএইচ



Advertiser