এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে লালমনিরহাটের সাত বছর বয়সী এক শিশু গৃহকর্মীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। হাসিনা খাতুন নামে সাত বছর বয়সী ওই শিশুকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) রাতে হাসিনার নানি আমেনা বেগম পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীকে অভিযুক্ত করে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ থেকে জানা যায়, আজাহার আলী সুমন নামে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে টাঙ্গাইল পুলিশ একাডেমিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে কাজ করছেন। তার স্ত্রীর নাম ডেইজি বেগম।
জানা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা আজাহার আলী সুমন এর বাড়ি আদিতমারী উপজেলার দুলালী গ্রামে। এক বছর আগে একই উপজেলার ভোলাবাড়ী ইউনিয়নের মহিষতুলি গ্রাম থেকে শিশু হাসিনাকে পড়াশোনা করানোর কথা বলে ঢাকায় শ্যমলীতে নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান তিনি। কিন্তু সেখানে নিয়ে তাকে দিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করানো হতো। কাজ না পারলে তাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন ওই কর্মকর্তার স্ত্রী ডেইজি বেগম। কান্নাকাটি করলে জোর করে ঘরে বন্দি করে রাখতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্যাতনের কারণে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পেড়লে গত রোববার (২৯ আগস্ট) বিকেলে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যান ওই কর্মকর্তার গাড়ি চালক মো. রিয়াজুল ইসলাম। তার কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনে লিখিত আকারে নেন এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ অন্যান্যরা। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় শিশুটিকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মঞ্জুর মোর্শেদ দোলন জানান, শিশুটি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তার পুরো শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। এর মধ্যে কিছু আঘাতের চিহ্ন নতুন এবং কিছু পুরোনো।
এ বিষয়ে শিশুটির সঙ্গে কথা বলা হলে সে বলে, ‘আমাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করানো হতো। কাজ করতে না পারলে হাতের কাছে যা পেতো তাই দিয়ে মারতো। মারের কারণে আমার মাথা ফেটে গেছিলো। কিন্তু কোনো ওষুধ না দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ কেরে রাখতো যেন কোনো মানুষ আমার কান্না না শুনে। কান্নাকাটি করলে আরও বেশি মারতো।’
শিশুটির মা রহিমা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের পুরো শরীরে কাটা দাগ। এমন কোন জায়গা নাই মারের দাগ নাই। আমি এর বিচার চাই।’
পুলিশ কর্মকর্তা আজাহার আলী সুমনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এঘটনায় আমি কিছুই জানি না।’
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ভুক্তভোগী পরিবার মামলা করতে চাইলে ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেখানেই মামলা করতে হবে।
মো. রবিউল ইসলাম/ এফআরএম/এমকেএইচ