বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আবারও বিদ্যালয়ে ফিরতে চায় আশরাফুল

অসচ্ছল পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা। সামান্য উপার্জনে সংসার চালানোর পাশাপাশি বড় দুই ছেলের পড়ালেখার খরচ মেটানোর পর মাস শেষে হাত খরচে টান পড়তো। তবুও ধার-দেনা করেই কোনোরকম চলছিলো তাদের জীবন-জীবিকা।

কিন্তু করোনায় এ পরিবারটিতে তৈরি করেছে হতাশার দীর্ঘশ্বাস। কর্মহীন হয়ে পড়েন বাবা। থেমে যাচ্ছিলো সংসারের চাকাও। অপরদিকে দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ। তাই অসচ্ছল বাবা-মা বাড়িতে বসিয়ে না রেখে তাদের ছোট ছেলে আশরাফুলকে (১২) চাকরিতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পারিবারিক সিদ্ধান্তে চাচা কামাল তাকে গাজীপুরের সদর উপজেলার মনিপুর বাজারে রনি মিষ্টান্ন ভান্ডার নামের একটি খাবার হোটেলে দৈনিক হাজিরায় চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। তাকে বলা হয়েছিলো বিদ্যালয় খুললে তাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু করোনার পর বিদ্যালয় খুললেও আশরাফুলের আর বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়নি।

আশরাফুল গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিনের ছেলে। সে স্থানীয় রামচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো।

GA-(2).jpg

মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারে গিয়ে আশরাফুলের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। সে জানায়, তাদের বাড়ি ছিলো ভোলায়। পাঁচ-ছয়বছর আগে তারা এ এলাকায় চলে আসে। বাবা পেশায় একজন কৃষক, মা গৃহিণী। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাবা-মা তাকে কাজে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে হোটেল কর্মচারী চাচার সঙ্গে ওই হোটেলেই কাজ শুরু করে।

সে আরও জানায়, আগামী জানুয়ারিতে তার বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা বাবা-মা জানিয়েছে। তবে চোখের সামনে বিদ্যালয়ের ড্রেসপড়া শিক্ষার্থীদের দেখলে ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠে। সঙ্গে ভর করেছে আদৌ কী বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হবে তার?

রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারের সত্ত্বাধিকারী হিরণ চন্দ্র ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, চাচা কামালের অনুরোধে আশরাফুলকে মাস খানেক আগে হোটেলে কাজে নেওয়া হয়েছিল। কাজে যোগ দেওয়ার সময় আমি তাকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলাম। সে যখনই চলে যেতে চাইবে তাকে যেতে দেওয়া হবে। বিদ্যালয়ে যেতে হোটেলের পক্ষ থেকে তাকে কোনো ধরনের অসহযোগিতা করা হবে না।

রামচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সবদুল হোসেন বলেন, করোনায় যখন বিদ্যালয় বন্ধ ছিলো আমাদের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা এবং বাসায় পড়াশোনার দিক নির্দেশনা দেওয়া হতো। যখন বিদ্যালয় খোলা হলো আমরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দেওয়া মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করেছি। যারা অনুপস্থিত আছে তাদের সহপাঠী দিয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যারা ঝড়ে পড়েছে তাদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে।

ফয়সাল আহমেদ/এসজে/এমএস



Advertiser