মিয়ানমারে পৌঁছেছেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। দেশটির সেনাপ্রধান মি অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের পর বিদেশি কোনো নেতা প্রথমবারের মতো মিয়ানমার সফরে গেলেন। যদিও তার এই সফরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন করা গোষ্ঠীগুলো। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তার এ সফরের সমালোচনা করছেন। খবর আল-জাজিরার।
দুইদিনের সফরে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন এখন মিয়ানমারে। তিনি শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে নেইপিদোতে পৌঁছান। দেশটির সেনাবাহিনীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী উন্না মং তাকে স্বাগত জানান। এরপর লালগালিচার সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাকে। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে প্রদান করা হয় গার্ড অব অনার।
কম্বোডিয়া হলো অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) বর্তমান সভাপতি, যেটি গত বছর মিন অং হ্লাইংকে সংগঠনটির বার্ষিক সম্মেলনে যোগদানের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছিল। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো হলো ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মিয়ানমার, ফিলিপাইনস, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। ১৯৯৭ সালে আসিয়ানের সদস্য পদ লাভ করে মিয়ানমার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি রিজিওনাল ডিরেক্টর ফর রিসার্চ এমেরলিন গিল বলেছেন, হুন সেনের ‘অনিয়মাতান্ত্রিক কূটনীতি’ ভালোর চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যদি হুন সেন সত্যিই সাহায্য করতে চান, আসিয়ানকে ভয়াবহ মানবাধিকার পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য, তার উচিত এই সফর বাতিল করা।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারে পৌঁছানোর খবরে বিক্ষোভ হয়েছে দেশটির বিভিন্ন স্থানে। রাজধানী নেইপিদো থেকে তিনশ কিলোমিটার দূরে দিপেইন শহরে বিক্ষোভকারীরা ‘হুন সেন ডন’ট কাম টু মিয়ানমার’ লেখা সম্বলিত পোস্টার-ব্যানার প্রদর্শন করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ হয়েছে মান্দালায়েসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে।
গতবছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নেয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তবে দেশটির সিংহভাগ জনগণ বিষয়টি মেনে নেয়নি। রাস্তায় বিক্ষোভ, সরকারি কাজকর্ম বয়কটসহ সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তারা। স্থানীয় মনিটরিং গ্রুপগুলো বলছে, মিয়ানমারে সেনা অভূত্থানের পর সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১৩শর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
এদিকে, দেশটির গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সূচি ১১ মাস ধরে কারাবন্দি। তার বিরুদ্ধে দুনীর্তি ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের আদালতে চলছে বিচার কার্যক্রম।
গত মাসেও দেশটিতে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বিধ্বস্ত কায়া রাজ্যে জান্তা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশুসহ ৩৫ জনকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ আসে। মিয়ানমারে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি আর্ন্তজাতিক বেসরকারি সংস্থা, সেভ দ্য চিলড্রেনের দুই কর্মীও সেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
এসএনআর/এমএস