মো. রওশন আলম পাপুল,গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলে কয়েক লাখ হেক্টর জমিতে গম, ভুট্টা, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এসব উৎপাদিত ফসল সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা। ফলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর তাই চরাঞ্চলের উৎপাদিত এসব ফসল দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের মাধ্যমে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের দাবি উঠেছে। রোববার দুপুরে গাইবান্ধা শহরে জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় মেকিং মার্কেটস্ ওয়ার্ক ফর দি চরস্ (এমফোরসি) প্রকল্পের উদ্যোগে গাইবান্ধায় চরাঞ্চলের চুক্তিবদ্ধ ফসল চাষ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চুক্তিবদ্ধ ব্যবসায়ীদের ফসল বাজারজাতকরণ এবং আর্থিক সেবার সংযোগ কর্মশালায় এসব দাবি করেন কৃষক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় এমফোরসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সুইস কন্টাক্ট বাংলাদেশ ও বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি। এতে সহযোগি সংস্থা হিসেবে কাজ করছে এসকেএস ফাউন্ডেশন। প্রকল্পটির কার্যক্রম গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ১২৫টি চরাঞ্চলে কাজ করছে।কর্মশালায় গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলের চুক্তিবদ্ধ কৃষক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।এসকেএস-এমফোরসি প্রকল্পের ইন্টারভেনশন স্পেশালিস্ট কৃষিবিদ মো. হাফিজুর রহমান শেখের সঞ্চালনায় কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন সুইস কন্টাক্ট বাংলাদেশের এমফোরসি প্রকল্পের ইন্টারভেনশন এরিয়া ম্যানেজার মো. রবিউল হাসান। কর্মশালার উদ্বোধন করেন জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন।
আরও বক্তব্য রাখেন হেড অব এসকেএস-এনআরবিসি পার্টনারশীপ প্রোগ্রামের বিবেকানন্দ অধিকারী, অগ্রনী ব্যাংক লিমিটেড ফুলছড়ি উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক মো. আনোয়ার হোসেন, এসকেএস ফাউন্ডেশনের মাইক্রোফিন্যান্স কর্মসূচির সমন্বয়কারী এটিএম রোকনুজ্জামান, কামারজানী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান, কৃষক ও ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম, হায়দার আলী ও ইমদাদুল ইসলাম প্রমুখ।কর্মশালায় বক্তরা বলেন, গাইবান্ধার চার উপজেলার ১৬৫টি চরাঞ্চলে চার লক্ষাধীক মানুষ বসবাস করেন। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর মূল পেশা কৃষি। তারা চরাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন কওে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু কোন কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় তারা জমি থেকে ফসল তুলেই অল্প দামে বিক্রি করে দেন। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ায় কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে তারা অধিক লাভবান হতো। তাই বিশাল এসব এলাকার কৃষকদের স্বার্থে কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের দাবি জানান বক্তারা।
কর্মশালায় ফসল সংগ্রহ পরবর্তী পরিচর্যা এবং ভালোমানের ফসল ক্রয়ে ব্যবসায়ীদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন এসকেএস-এমফোরসি প্রকল্পের সিনিয়র ইন্টারভেনশন কর্মকর্তা চন্দ্রনাথ গুপ্ত। সেই সাথে চরাঞ্চলের চুক্তিবদ্ধ ব্যবসায়ী, বড় ব্যবসায়ী, অ্যাগ্রোপ্রসেসিং কোম্পানী, মাইক্রোফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট, বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিগণের মধ্যে পরিচিতি ও সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসল বিক্রয় নিশ্চিত করা এবং ব্যবসায়ীদের আর্থিক সেবায় প্রবেশাধিকার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।এছাড়া চরাঞ্চলের উচ্চ মূল্যের উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ, গুনগতমান ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা, চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসলের গুনগতমান, ক্রয় নির্ধারক, মূল্য পরিশোধ, বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংযোগ তৈরির মাধ্যমে চরের চাষীদের উৎপাদিত ফসল ক্রয়ে সহায়তা, বিভিন্ন ফিড মিল কোম্পানী এবং সরবরাহকারী বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চরাঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বাজার মূল্যে ফসল বিক্রিতে সহায়তা, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ীক ঋণ পেতে সহায়তা করা যাতে চাষীদের উৎপাদিত ফসল ক্রয়ে সহায়ক হবে এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে চরের কৃষক, বড় ব্যবসায়ী, ফিড ও তৈল মিল মালিক, স্বনামধন্য কোম্পানি এজেন্টদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে যা চরাঞ্চলের কৃষকদের বিভিন্ন সেবা পেতে এবং ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সম্প্রসারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় কর্মশালায়।
The post গাইবান্ধার চরাঞ্চলে কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের দাবি appeared first on গোবি খবর.