শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০২২

ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের শেষ বাজেট

মৃণালকান্তি দেব নাথ

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) ২০২২-২৩ সালের জন্য ২৬ হাজার ৮৯২ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। রাজ্যটির অর্থমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা এই বাজেট পেশ করেন। এবারের বাজেট বিগত অর্থ বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।

রাজ্য বিধানসভায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য যে বাজেট পেশ করা হয়েছে তাকে একটি জনমুখী বাজেট বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। শাসক দলের পক্ষ থেকেও দলের মুখ্য বক্তা সুব্রত চক্রবর্তী বাজেটকে শুধু জনমুখী নয়, বরং সব অংশের জনগণই এই বাজেটের মাধ্যমে সুবিধা পাবেন বলে মনে করেন।

বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অবশ্য বাজেট নিয়ে যথেষ্ট অসন্তুষ্টি রয়েছে। চমক ছাড়া এই বাজেটকে তেমন কিছুই মনে করছে না তারা। পাশাপাশি অধিবেশনের শুরুতে প্রথম দিনেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একবার ওয়াকআউট করেন বিরোধী দলের সদস্যরা। পরে দিনের শেষে একটি সংশোধনী বিল নিয়ে আরও একবার ওয়াকআউট করেন।

শুরুতে রাজ্যপাল তার ভাষণ শুরু করতে গেলে বিরোধী দলের সদস্যরা একে একে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একদিকে যেমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন, তেমনি তার ভাষণও বয়কট করেন। রাজ্যপাল অবশ্য পরে তার ভাষণটি অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যান। এরপর ১৫ মিনিটের জন্য মুলতবি করা হয় বিধানসভা অধিবেশন।

অধিবেশন শেষে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে এক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, রাজ্যের এই প্রস্তাবিত বাজেটে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বাজেট বৃদ্ধির বিষয়টিকে রাজ্যের জন্য একটি ইতিবাচক দিক বলে মনে করেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধনী ব্যয়ের (ক্যাপিটেল এক্সপেনডিচার) পরিমাণ দ্বিগুণ করা বাজেটের একটি বড় দিক। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটে যেখানে মূলধনী ব্যয় ছিল দুই হাজার ৬৫১ কোটি টাকা, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেটে দ্বিগুণ বাড়িয়ে পাঁচ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।

মূলধনী ব্যয়ের মাধ্যমে রাজ্যের আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বিধানসভা অধিবেশনের পর বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার পৃথকভাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এই বাজেটে ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যাবে। কর্মসংস্থান ইস্যুতে আলোচনা করার সময় পরিষদীয় মন্ত্রী রতন লাল নাথ যেভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তারও তীব্র নিন্দা জানান তিনি।

তিনি বলেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা যেখানে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে সেখানে মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন রাজ্যপাল। অসুস্থতার কথা বলে বারবার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। অথচ বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন সরকারের লিখিত বক্তব্য তিনি তুলে ধরতে উপস্থিত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বিগত বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সেসব প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারে কোনো উল্লেখ নেই বাজেটে। করোনায় রাজ্যের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করা হলেও আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বাজেটের বক্তব্যকে সমর্থন করছে না সরকারেরই অর্থনৈতিক সমীক্ষার রিপোর্ট।

বিজেপি আইপিএফটি জোট সরকারের এটিই ছিলো পঞ্চম ও শেষ বাজেট। ভিশন ডকুমেন্টের প্রতিশ্রুতিগুলো আগের চারটি বাজেটে স্থান না পেলেও পঞ্চম তথা শেষ বাজেটে তা স্থান পাবে বলে আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু তা আর হলো না। সাধারণ জনগণ তাই হতাশ হয়েছেন বলেই মনে করেন বিরোধী দলনেতা।

এমএসএম/এমএস



Advertiser