সোমবার, ৩০ মে, ২০২২

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র!

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে পদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য তথ্য সংগ্রহ ফরমে সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী নামের ওই নেতা নিজেকে বাংলা বিভাগের ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি করেছেন। তবে বাংলা বিভাগে খোঁজ নিয়ে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সদ্য ঘোষিত ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক পদ পেয়েছেন তিনি। গত ১০ মে ওই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া এই ব্যক্তি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন না।

পদ পাওয়া সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী জাগো নিউজের কাছে দাবি করেছেন, তিনি তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত ঢাকা কলেজে পড়ালেখা করেছেন।পরে ভর্তি বাতিল হওয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করেছেন।

ঢাকা কলেজের অফিসে খোঁজ নিয়ে সাজ্জাদ হোসাইন নামে দুজনের ভর্তির তথ্য পাওয়া গেছে। ওই সেশনে ভর্তি হওয়া এক সাজ্জাদ হোসাইনের পিতা-মাতার নামের সঙ্গে কমিটিতে পদ পাওয়া সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরীর পিতা-মাতার নামের মিল পাওয়া যায়নি। আরেক সাজ্জাদ হোসেনের পিতা-মাতার নাম জানা যায়নি। তবে সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী নামে কারো ভর্তির বিষয় নিশ্চিত করতে পারেনি ঢাকা কলেজ অফিস।

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে বিভিন্ন নেতাদের আর্থিক লেনদেন, আঞ্চলিক স্বজনপ্রীতি, যোগ্য ব্যক্তিদের অবমূল্যায়ন, অছাত্রদের পদায়নসহ প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির চরম বহিঃপ্রকাশ এবং নতুন কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে সহ-সভাপতি পদ থেকে মেসকাত হোসেন তনয় নামে এক নেতা পদত্যাগ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেসকাত বলেন, আমাদের কমিটির সিনিয়র যুগ্ন-সম্পাদক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীই না। সে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পদ পেয়েছে। আমি কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সেলে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। কমিটিতে যোগ্য ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা হয়নি।

এছাড়া নতুন কমিটির দশ থেকে বারোজন সহ-সভাপতি এবং যুগ্ম-সম্পাদক এক হয়ে বিএনপি মহাসচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেবেন বলেও জানান তিনি।

নতুন কমিটির আরেক সহ-সভাপতি পিয়াল হাসান বলেন, আমি ২০০৯-১০ সেশনে বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলাম। আমি সাজ্জাদ হোসেনকে কখনো ডিপার্টমেন্টে বা পরীক্ষার সময় দেখিনি। সে ঢাকা কলেজের ছাত্রই না।

ঢাকা কলেজের ছাত্র না হয়েও ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের পার্টির সব নিয়ম মেনেই আমি পদ পেয়েছি। আমি ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আগের কমিটিতেও ছিলাম।

তবে তিনি দাবি করেন, তৃতীয় বর্ষের পর আর ঢাকা কলেজে পড়েননি। ভর্তি বাতিল করে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন।

ঢাকা কলেজে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়ার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে এসব দেখাতে রাজি হননি।

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুলহাস মৃধা বলেন, এটা আপনারা কীভাবে জানলেন জানি না। তবে এটা সঠিক না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, এর আগেও দুইটা কমিটিতে সে ছিল। সাত কলেজে ছাত্রত্ব ধরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। সবাই এখন ছাত্র না। বিষয়টা এরকমই দাঁড়াবে। যে একবার ভর্তি হয়েছে ডেফিনেটলি ছাত্র। এটা একদম স্পষ্ট বিষয়।

কমিটিতে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ জানতই না আমরা কমিটি দেবো। আর্থিক লেনদেন তো দূরের কথা, যোগাযোগ করার সুযোগ পাইনি। এগুলো অবাস্তব কথাবার্তা। যে বা যারা এই অভিযোগ করেছে তাদের নিজেদেরও সামর্থ্য নেই কাউকে চা খাওয়ানোর বা কাউকে অর্থনৈতিক সহায়তা করার। এসব নিরর্থক কথাবার্তা।

নাহিদ হাসান/এমএইচআর/জিকেএস



Advertiser