শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২

নারী ক্ষুদ্র ঋণ পেলেও খরচ করেন পুরুষ

আর্থিক সচ্ছলতা, গতিশীলতা এবং পারিবারিক সিদ্ধান্তে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হয় নারীদের। দেশে ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষুদ্রঋণ পান নারীরা। এ সংখ্যা প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এর মাধ্যমে অনেক নারী সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই নারীর পাওয়া ঋণের টাকা পুরুষরাই খরচ করে থাকেন।

এর পেছনে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো, প্রথা ও রীতিনীতির প্রভাব রয়েছে। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি তদারকি বা সমাধানের জন্য তেমন আগ্রহী নয়। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ সোহেল এবং অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক ড. সারা নাইনার ও ড. সামান্থি জে. গুনাওয়ার্দানা যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন। এতে মূলত খুলনার ডুমুরিয়া এলাকায় জরিপ ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নারীরা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে নিজে ব্যবহার করতে পারছেন কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।

গবেষণায় নারীদের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট উঠে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোয় যদি নারীদের কাজের প্রাপ্য স্বীকৃতি না দেওয়া হয় এবং ঐতিহ্যগতভাবে নারীদের একক দায়িত্বের পরিবর্তন না ঘটে, তবে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কারণ, বিষয়গুলো নারীদের আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষমতায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিতে সাংস্কৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এসব মনোভাবকে পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

গবেষকদের দাবি, ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি সমাধান না করে বরং নারীর ক্ষমতায়নের প্রমাণ হিসাবে হাই লোন রিকভারি (উচ্চ ঋণ পুনরুদ্ধার) হারের ওপর জোর দিচ্ছে। এটি নিশ্চিত করার জন্য শ্রমের লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন, চলাফেরার সীমাবদ্ধতা এবং সম্মান ও লজ্জার ধারণাগুলোর মধ্যে স্পষ্টভাবে নারীদের কাঠামোগত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছে। তারা নারীর ক্ষমতায়নের মিথ্যা আখ্যা দিয়ে তাদের মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

এ বিষয়ে খুবির সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ সোহেল বলেন, আমি মনে করি ক্ষুদ্র ঋণের প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু এর উদ্দেশ্য তখনই সফল হবে, যখন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোকে অনুধাবন করে নারীদের অবস্থান ও দুর্বলতাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পগুলো পরিচালনা করবে।

এসজে/জিকেএস



Advertiser