বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২

৩ বছর ধরে হয় না অস্ত্রোপচার

 

তিন বছরের বেশি সময় ধরে একটিও অস্ত্রোপচার হয়নি খুলনা ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অ্যানেস্থেসিস্ট না থাকায় অপারেশনের রোগীদের যেতে হয়ে অন্যান্য হাসপাতালে। দীর্ঘদিন পর একজন অ্যানেস্থেসিস্ট নিয়োগ করা হলেও এখনও তিনি যোগদান করেননি।

এদিকে হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন চলছে ভাড়া করা লোক দিয়ে। আর আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন বন্ধ রয়েছে অপারেটরের অভাবে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের পানি সরবরাহ মোটরটি প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে।
চিকিৎসকরা নিজের পকেটের অর্থ দিয়েই মেরামত করে চালাচ্ছেন। চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংকট অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর মতো ফুলতলাতেও প্রকট।

এত এত সংকটের মধ্যে দিয়েই চলছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালটি।
খুলনা মহানগরী থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ফুলতলার দামোদর এলাকায় অবস্থিত ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সড়ক পথে অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর চেয়ে খুব ভালোভাবেই যাতায়াত করা যায় এই উপজেলা হাসপাতালে।

খুলনা-যশোর মহাসড়কের সঙ্গে লাগোয়া হাসপাতালটির পরিবেশ ছিমছাম হলেও ভেতরে বলতে গেলে ফাঁকা। দশ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র তিনজন। আর সদ্য বিসিএস শেষ করা চিকিৎসক আছেন ১১ জন। সবমিলিয়ে ১৬ জন চিকিৎসক সেবা দিয়ে চলেছেন প্রায় দুই লাখ জনগণের এই হাসপাতালে।

সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে অন্য হাসপাতালের তুলনায় অনেক বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। আউটডোরেও ডাক্তার দেখাতে এসেছেন অনেক রোগী। তবে হাসপাতালে কোনো অপারেশন না হওয়ায় পোস্ট অপারেটিভ কেবিন আর অপারেশন থিয়েটার রয়েছে তালাবদ্ধ। ধার করে চালানো হচ্ছে এক্স-রে মেশিন। দীর্ঘদিনের পুরনো ভবনের অনেক স্থানে ফাটলও রয়েছে। ঝাড়া মোছার লোক না থাকায় ধুলাবালির স্তর প্রায় সবখানেই।

হাসপাতালের সামনের দোকানিরা জানান, হাসপাতালটিতে বছরের পর বছর কোনো অপারেশন হয় না। রোগী এলেই ফেরত দেওয়া হয়। অনেক রোগী দূরে যেতে চায় না। তারা কান্নাকাটি করে। কিন্তু কোনো উপায় থাকে না। অপারেশনের রোগীদের স্থানীয় ক্লিনিক বা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়।

উপজেলার আলকা এলাকার বাসিন্দা তোজাম্মেল হোসেন বলেন, রোগীর অবস্থা একটু বেকায়দা হলেই এখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় খুলনায়। সিজার বা অন্য কোনো অপারেশন এখানে শেষ কবে হয়েছে তা বলতে পারে না কেউ। অপারেশন করা লাগবে এমন কোনো রোগী এলেই বাইরে থেকে তাকে বলা হয় অন্য কোথাও যেতে।

হাসপাতালটিতে অনেক কিছুর সংকট রয়েছে স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জেসমিন আরা বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও জনবল নেই। সেই ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে সবকিছু। তবে সেটাও ঠিকমতো নেই।

ডা. জেসমিন আরা বলেন, আমি এখানে এসেছি ২০২০ সালে। তার আগে থেকেই এখানে অপারেশন বন্ধ। তবে চলতি জুলাই মাস থেকে একজন অ্যানেসথেসিস্ট এখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যিনি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে অপারেশনে সহায়তা করবেন। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন চালু রাখতে একজনকে বাইরে থেকে শিখিয়ে আনা হয়েছে। আর আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন অপারেট করার জন্য লোক চাওয়া হয়েছে। হয়তো চলতি মাসেই মেশিনটি আমরা চালাতে পারবো।

হাসপাতালে লোকবলের তীব্র সংকটের কথা উল্লেখ করে এই চিকিৎসক আরও বলেন, এখানে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নেই। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরও সংকট রয়েছে। এক কাজের লোক দিয়ে অন্য কাজ করাতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, এই হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা গড়ে ৪৫ জন। আর আউটডোরে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হয়।

পানির বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে অনেক আগের একটা মোটর দিয়ে পানি উত্তোলন করে তা হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। গত কয়েকদিন আগে মোটরটি অকেজো হয়ে যায়। মেরামত করার জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় নিজের টাকায় সেটি ঠিক করা হয়।

এফএ/এমএস



Advertiser