সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো শুরু করেছে তাদের প্রস্তুতি। নেতা-মন্ত্রীদের বাক্যবাণে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন। দেশি-বিদেশি প্রভাবকরাও বেশ সক্রিয়। পাশাপাশি চলমান বিশ্ব সংকটের আঁচ দেশের অর্থনীতিতে। এমতাবস্থায় দল গুছিয়ে ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে নির্বাচন করা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জের। তবে দলটির নেতারা বলছেন, চ্যালেঞ্জ নিশ্চয় আছে, তবে সেটা ওভারকাম করার প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবি নিয়ে প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে বিএনপি। চলতি বছরের ২৪ মে ওই সংলাপ শুরু হয়। প্রথম দফায় মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ হয়।
পরে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, সাম্যবাদী দল ও ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সঙ্গেও সংলাপ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। সরকারবিরোধী সব দলের সঙ্গেই সংলাপ করবে দলটি। নিজেদের শর্তে ছাড় দিয়ে হলেও সরকারবিরোধী জোট শক্তিশালী করতে চায় তারা। পাশাপাশি রাজপথেও এরই মধ্যে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে বিএনপি।
এদিকে, নির্বাচন সামনে রেখে দেশি-বিদেশি প্রভাবকরাও বেশ সক্রিয়। গত ৬ আগস্ট তিনদিনের সফরে ঢাকা এসেছিলেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসন। খাদ্যনিরাপত্তা, বিশ্ব স্বাস্থ্য, মানবাধিকার, মানবিক প্রয়োজন, শান্তিরক্ষা ও রোহিঙ্গাদের সহায়তার মতো যুক্তরাষ্ট্রের বহুপাক্ষিক অগ্রাধিকারের বিষয়ে আলোচনা হয় তার সফরে।
একই দিন (৬ আগস্ট) চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ১৭ ঘণ্টার সফরে বাংলাদেশে আসেন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন।
বিশ্ব পরাশক্তির আলোচিত দুই দেশের প্রতিনিধিদের সফর আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে নানান বার্তা দেয় দেশের রাজনৈতিক মহলে।
পাশাপাশি দেশে বিশ্ব অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির একটা দৃশ্যমান প্রভাব বিদ্যমান। ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বমুখী। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, ফলে বাসভাড়ায় চলছে নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্যের বিরোধী খোদ ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।
অন্যদিকে তৃণমূলে আওয়ামী লীগও কোন্দল আর গ্রুপিংয়ে দ্বিধাবিভক্ত। তৃণমূল থেকে দল গুছিয়ে নির্বাচন করাটা আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জই মনে করছেন দলটির নেতারা। তাদের দাবি, সামনে দুটো চ্যালেঞ্জ- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তৃণমূল থেকে দলকে গুছিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা এবং বিশ্বের টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের জনগণকে শান্তি ও স্বস্তিতে রাখা। এজন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের কাজটি করছে।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, চ্যালেঞ্জ তো বটেই। সব সময় ইতিবাচক বা শুভ রাজনীতির বিরুদ্ধে অপশক্তি বা অশুভশক্তি বরাবরই সক্রিয় থাকে। বরাবরই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। এখন বৈশ্বিক পরিস্থিতির কিছুটা বেখাপ্পা অবস্থা। সেটা কাজে লাগিয়ে অপশক্তি তাদের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করবেই। আজকের এই বাস্তবতা ও সঙ্গত কারণটি মানুষকে বুঝিয়ে, দলকে শক্তিশালী করে, সংগঠনকে আরও বেগবান করে আমরা আগামী নির্বাচন মোকাবিলা করবো, এই প্রস্তুতি আমাদের আছে। এই প্রস্তুতি আমরা উত্তরোত্তর আরও বাড়িয়ে সামনের দিকে এগোবো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি। আমাদের এখন মূল কাজ সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায় থেকে ঢেলে সাজিয়ে শক্তিশালী করা। সেটার কাজ চলছে এবং শেষ পর্যায়ে। পাশাপাশি যেহেতু দল ক্ষমতায় সে কারণে এখন দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার যাতে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নমুখী রাখা যায়- সেজন্য সরকারের পাশে থেকে সহায়তা করা। আমাদের এটাই মূল লক্ষ্য- যাতে জনগণ শান্তিতে থাকতে পারে, স্বস্তিতে থাকতে পারে। এটা হলে আগামী নির্বাচনে আমাদের দল আবারও জনগণের সমর্থন নিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করবে। এটা আমরা প্রত্যাশা করি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সামনের জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং। আওয়ামী লীগ একটানা দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনা করছে। দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের টেকসই উন্নয়ন ও মানবকল্যাণ করেছেন। কিন্তু অতিসম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল ধাক্কা আমাদের দেশেও লেগেছে। পরিকল্পিতভাবে প্রতিনিয়ত জনমনে আশঙ্কা তৈরি করা হচ্ছে, মানুষের মাঝে বিরাজ করছে অস্থিরতা। দেশবিরোধী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীরা বৈদেশিক মুদ্রা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত করে চলমান বৈশ্বিক সংকট অধিকতর ঘনীভূত করছে।’
‘বাস্তবতা হলো আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য জামায়াত-বিএনপির কন্ট্রোলে। এই সুযোগে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অপচেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় বর্তমান সংকট মোকাবিলা এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দেশপ্রেমিক শক্তির বিজয়ের মাধ্যমে দেশকে সঠিক পথে রাখার জন্য কর্মপন্থা ও রণকৌশল নির্ধারণের কাজ চলছে।’
তবে পরিস্থিতি যাই হোক, আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে যাবতীয় আয়োজন করছে ক্ষমতাসীন দলটি। তাদের এবারের টার্গেট মেগা প্রজেক্টগুলো শেষ করতে ফের ক্ষমতা আরোহণ।
এসইউজে/এএসএ/জিকেএস