বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২

নেই সড়কবাতি-সিসি ক্যামেরা, নারায়ণগঞ্জের মহাসড়কে বাড়ছে ডাকাতি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ডাকাতির প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। রাত যত গভীর হয় মহাসড়কে ডাকাত চক্রগুলো ততই সক্রিয় হয়ে ওঠে। এসব চক্রের কবলে পড়ে অনেকেই হারাচ্ছেন সর্বস্ব।

যাত্রীদের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কে কোনো সড়কবাতি ও সিসি ক্যামেরা না থাকায় ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে। একই সঙ্গে বাসের চালকরা নিয়ম না মেনে রাতে মহাসড়ক থেকে যত্রতত্র যাত্রী তোলার ফলেও এ ঘটনা বেশি ঘটছে।

সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন ও তার গাড়িচালক মো. ইয়াছিন বাদশাকে কুপিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১৯ হাজার টাকা, ৬০ হাজার টাকা মূল্যের চারটি মোবাইল সেট নিয়ে যায় ডাকাতরা। এ ঘটনায় ১ অক্টোবর ওসি আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পর মহাসড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

jagonews24

এদিকে ২৯ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের নয়াপুর বাজারের ঈদগাহ মাঠের সামনে থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ চার ডাকাতকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি লোহার চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল, তিনটি টর্চলাইট এবং একটি কাটার প্লাস জব্দ করা হয়।

২০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের সরাবদী এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্র ও ককটেলসহ আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র কাশেম বাহিনীর ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি ককটেল, তিনটি ছুরি, একটি কাটার, দুটি ক্রোবার, পাঁচটি টেঁটা, ১৩টি টর্চলাইট জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা হয় একটি রূপার চেইন, ২৪ হাজার ৯০০ টাকা ও ৯টি মোবাইল।

১০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া বাজার এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাত দলের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। এসময় তাদের নিকট থেকে একটি চাপাতি, একটি সুইচ গিয়ার চাকু, একটি তালা কাটার, দুটি হাসুয়া, একটি লোহার ছোড়া, দুটি শাবল, দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়।

গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আহমেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদারে আমরা নিয়মিত টহল দিয়ে যাচ্ছি। তবে মহাসড়কে সড়কবাতি না থাকায় আমাদের কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। সিসি ক্যামেরার বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি বলতে পারবেন।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি রোধে আমরা নিয়মিত টহল দিচ্ছি।

সিসি ক্যামেরার বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো মহাসড়কেই সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

jagonews24

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সাহানা ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশের কোনো মহাসড়কেই সড়কবাতির ব্যবস্থা করা হয় না। মহাসড়কে সড়কবাতির ব্যবস্থা করতে গেলে অনেকগুলো বিষয় এর সঙ্গে জড়িত থাকে। আপাতত ফুটওভার ব্রিজগুলোতে আলোকবাতির ব্যবস্থা করছি।

তিনি আরও বলেন, যাত্রাবাড়ীর কাজলা থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর অংশ পর্যন্ত সড়কবাতি লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া মাত্রই আমরা এর কাজ শুরু করে দিবো। এছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা-গাউছিয়া এলাকায় কিছু সড়কবাতি লাগানো হয়েছিল। কিন্তু সড়কবাতির তারগুলো বারবার চুরি হয়ে যাওয়ায় আমরা এর সুফল পাচ্ছি না।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, মহাসড়কে বর্তমানে ডাকাতির ঘটনা অনেকাংশেই কমে গেছে। কিছুদিন আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওসিকে কুপিয়ে ডাকাতির ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতি অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটিয়ে অপরাধীরা পালিয়ে যায়। মহাসড়কে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, বন্দর থানা, সোনারগাঁ থানা পুলিশের পাশাপাশি কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

চলতি বছরে শুধু মহাসড়কেই ১৪টি অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত চক্রের ৪৮ সদস্যকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।

তিনি বলেন, ডাকাতি-ছিনতাই রোধে আমরা শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই নয় পুরো নারায়ণগঞ্জে টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছি। এজন্য আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।

রাশেদুল ইসলাম রাজু/এসজে/জিকেএস



Advertiser