বেড়াতে এসেও খোঁচা দিলে, তুমি যদি বেড়াতে এসেও বাবুর্চি কেয়ারটেকার নিয়ে বসে থাকো, তাহলে তো খোঁচা শুনতেই হবে।
আহা, দুইজোড়া আব্বা আম্মা সাথে এনেছি, তাদের ভালোমন্দ দেখতে হবে না?
আচ্ছা তাদের সাথে আনলে কেন?
আমি তুমিও তো আসতে পারতাম...
সেই বিয়ের পরের হানিমুনের তিনদিন ছাড়া আমরা দুজনে তো আর কোথাও যাইনি। শুরু হলো অভিযোগ, কখন যেন গোয়েন্দাগিরি শুরু হয়...
হুম, যার যা কাজ...
চলো বাইরে যাই, ঘরের মধ্যে আর কতক্ষণ
জারা চোখ তুলে তাকালো আসিফের দিকে, এই জামানায় কি নিরামিষ একটা ছেলে, কখনো এসে একটু জড়িয়েও ধরে না, জারা তার বিয়ে করা বউ!
জারা খুবই স্মার্ট এবং সুন্দর, এখনো গন্ডায় গন্ডায় ছেলে তার পিছে ঘোরে, অফিসেও কেউ একটু কথা বলতে পারলে বর্তে যায়, জারা একটু হেসে উত্তর দিলে তো কথাই নেই, সেই মেয়ে পেলো এমন উন্নত প্রজাতির রোবট বর।
জারা উঠে বললো বাবাদের জন্য দাবা বা ক্যারাম খেলার ব্যবস্থা করে দিতে পারো বা বড়শী দিয়ে মাছ ধরার যদি পুকুরে মাছ থাকে, তাদের সময় কাটতো।
হুম, ভালো বলেছো তো, কেয়ারটেকারকে বলে দেখি। যদিও আমরা মোটে দুইদিন থাকবো, পরশু বিকেলের ফ্লাইটে আমরা চলে যাবো, তরশু আমার একটা জরুরি মিটিং আছে, জানো তো।
জারা আসিফের দিকে তাকিয়ে থেকে রান্নাঘরে গেলো, একটা পাহাড়ি মেয়ে শীল পাটায় মসলা বাটছে, উঁচু করে খোঁপা বাঁধা, খোঁপায় কি যেন একটা ফুল...জারাকে দেখে মিষ্টি করে হাসলো, বললো সামছু, ম্যাডামরে চেয়ার আগাইয়া দে।
না না চেয়ার লাগবে না, সুন্দর গন্ধ আসছিল রান্না ঘর থেকে, তাই ভাবলাম একটু দেখে যাই, আমি এখনি চলে যাবো, তোমার খোঁপার ফুল খুব সুন্দর, নাম কি?
ধুতুরা ফুল খোঁপায় দিসি...
আমার নাম মালতি।
সুন্দর নাম,
ধুতুরা ফুলে কি বিষ আছে?
বীজে বিষ আছে ম্যাডাম, ফুলে নাই
ফুলের গাছটা কোনদিকে?
এই বাংলোর বাম পাশের দিকে যেই জঙ্গল সেই দিকে একটা শর্টকাট রাস্তা আছে, আমি ওই দিক দিয়া আসছি, তখন গাছ থেকে নিয়া খোঁপায় পরছি।
ওই তু্ই হাত ধুইছিলি ঠিকমতো মসলা বাটার আগে?
বাবুর্চি শামছু জিজ্ঞাসা করলো মালতিকে...
হ, ধুইছি সাবান দিয়া...
হাঁসের মাংস রান্না হচ্ছে, সাদা ভাত করবেন..
পোলাও বা খিচুড়ি না কিন্তু।
জ্বি ম্যাডাম, স্যার বলছেন।
জারা বেরিয়ে তার বাবাকে খুঁজতে লাগলো...
অনেকদিন বাবাকে সময় দেওয়া হয় না, গিয়ে দেখে দুই বাবা মিলে দাবা খেলছে, আসিফ একটু দূরে দাড়িয়ে ছবি তুলছে, জারার মন ভালো হয়ে গেলো।
রাতে খাওয়ার টেবিলে অনেক হৈ হুল্লোড় হলো, রান্না বেশ মজাদার, চিতল মাছের ভুনা অসাধারণ হয়েছে শামছু, শিরিন নাহার বললেন। হাঁসের মাংসও তো চমৎকার...
আরিফুর রহমান বললেন...
শামসু মিটিমিটি হাসছে।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যে যার ঘরে, জারা আসিফের জন্য অপেক্ষা করছে আর মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করছে, অনেকদিন পর বেশি খেয়ে ফেলছে।
প্রায় আধাঘণ্টা পর আসিফ এসে বলছে তুমি ঘুমাওনি এখনো? আমি একটু শামসুর সঙ্গে বের হচ্ছি, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে চলে আসবো, তুমি ঘুমাও...
এর মানে কি...কোথায় যাও?
তুমি বেড়াতে এসেও আমাকে সময় দিবা না! এই অচেনা জায়গায় আমি একা ঘুমাবো?
আহা পাশের রুমগুলোতে তো বাবা-মা সবাই আছেন, বাইরে দারোয়ান, কেয়ারটেকার আছেন, একা কোথায়?
আমি বুঝি না, তুমি এমন কেন?
বাবুর্চির সঙ্গে এই মধ্যরাতে তুমি কোথায় যাও?
চলে আসবো একটু পরেই, তুমি ঘুমাও
আসিফ বেরিয়ে গেলো...
জারার এত মন খারাপ হলো, চোখে পানি চলে এসেছে, বিয়ের পর থেকেই দেখছে আসিফ কেমন খাপ ছাড়া, তার দিকে কোনো মনোযোগ নেই, খারাপ ব্যবহার করে না কিন্তু সম্পর্কে কোনো উষ্ণতাও নেই।
এই সময়ে সারা ফোন করলো মেসেঞ্জারে, কেমন আছো আপু? এখনো ঘুমাওনি?
ভালো, বেড়াতে এসেছি সবাই মিলে, তু্ই কেমন?
আমিও ভালো, আব্বু আম্মু ভালো?
জানো এক হাদারাম বাংলাদেশি ছেলে মাস্টার্স শেষ করে এখন গ্রিন কার্ডের অ্যাপ্লাই করেছে, আমাকে বলে আপনার একটা ছবি দেন, গ্রিন কার্ড পেলে বাবা মাকে দেখাবো, তারা পছন্দ করলে আমরা বিয়ে করতে পারি...
চিন্তা করছো, ছাগল কি বলে?
বললাম আপনাকে কে বলেছে আমি আপনাকে বিয়ে করতে আগ্রহী?
আর আপনার বাবা-মা আছে, আমার নেই?
বেকুব আমার দিকে তখন চুপচাপ তাকিয়ে আছে,
আসিফ ভাইয়ের কি খবর? তুমি তো লাকি, ভালো বর পেয়েছো...
হুম ভালো, আচ্ছা ঘুম পাচ্ছে, ফোন রাখিরে... পরে কথা বলবো, সকালে উঠতে হবে, আল্লাহ হাফেজ।
মোবাইলটা পাশে রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো জারা, এরপর এটা সেটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।
চলবে…
এমআরএম/জিকেএস