নওগাঁয় গত বছরের লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই এবার নতুন উদ্যমে চলছে ইরি-বোরোর চাষাবাদ। ইরি-বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তবে কনকনে ঠান্ডা ও কুয়াশায় কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। এরই সঙ্গে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। তবে আবহাওয়া ঠিক থাকলে ফলন ভালো হবে বলে আশা কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর বোরো আবাদে জেলার ৪০ হাজার কৃষককে পাঁচ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও পাঁচ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা হিসেবে কৃষি অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে। জেলায় ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমি রোপণ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
আরও পড়ুন: শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে ইরি-বোরো চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষক
জেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে জমি প্রস্তুত ও রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। তবে এ বছর শীতের কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে। জিরাশাইল, ব্রিআর-২৮, ৪৮, সুবর্ণ লতা ও হাইব্রিড জাতের ধান লাগানো হচ্ছে।
সদর উপজেলার চকচাপাই গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বোরো মৌসুমে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জমিতেইে ধান কাটা-মাড়াই করতে হয়েছিল। এ বছর যদি আবহাওয়া ভালো থাকে এবং কোনো ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে সুষ্ঠুমতো ফসল ঘরে তুলতে পারবো। এবার ১৬ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি।
আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে ইরি-বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা
একই গ্রামের কৃষক খবির উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, সার, কীটনাশক, জ্বালানি তেল ও শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন খরচ বেড়েছে। জমিতে বিঘাপ্রতি হালচাষ এক হাজার টাকা, ডিএপি সার- ৪৪০ টাকা (২০কেজি), পটাশ সার ৪৪০ টাকা (২০ কেজি), ইউরিয়া ৬৩০ টাকা (৩০ কেজি), কীটনাশক দুই হাজার টাকা, চারা রোপণ এক হাজার ৫০০ টাকা, ঘাস নিড়ানি এক হাজার ৫০০ টাকা, পানি সেচ দুই মণ ধান (বাজারমূল্য দুই হাজার ৪০০ টাকা) এবং ধান কাটা মাড়াই ৫-৬ হাজার টাকা (মোট-১৪ হাজার ৯১০ টাকা)। বোরো আবাদ লাগানো থেকে শুরু করে ঘরে উঠা পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর বিঘাপ্রতি ফলন হয় প্রায় ২৪-২৮ মণ। যদিও গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এবছর আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না। বাজারে ধানের দামও ভালো পাওয়া যাবে।
শৈলগাছি গ্রামের কৃষক মজনু সরদার বলেন, জমি রোপণ করেছি ১৭ দিন হয়েছে। প্রচুর কুয়াশা ও শীতের কারণে চারা হলুদ হয়ে নষ্ট হচ্ছে। যেসব চারা নষ্ট হয়েছে সেখানে নতুন পরিগুজ দিতে হবে। এতে বাড়তি খরচ হবে।
আরও পড়ুন: শীতে কাঁপছে কুড়িগ্রাম, থমকে আছে ইরি-বোরো আবাদ
জেলার সাপাহার উপজেলা থেকে কাজ করতে আসা আমিরুল ইসলাম বলেন, এলাকায় কাজ না থাকায় ১৫ জন বোরো ধান রোপণের কাজ করতে সদর উপজেলায় এসেছি। বিঘাপ্রতি ১৩০০-১৫০০ টাকা চুক্তিতে ধান রোপণের কাজ করা হচ্ছে। শীতের কারণে জমির কাঁদা-পানিতে কাজ করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ঠান্ডার কারণে দিনে ৩-৪ বিঘা জমি রোপণ করা হচ্ছে। আমাদের আয় রোজগার কমে গেছে।
জেলার আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, সার, কীটনাশক, জ্বালানি তেল ও শ্রমিকের দাম বেড়েছে। গত বোরো মৌসুম থেকেই ধানের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ধানের আবাদে প্রচুর পরিশ্রম ও খরচ হয়। সে তুলনায় লাভবান হওয়া যায় না। যেহেতু ফসল উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেহেতু ধানের দাম ১২০০ টাকার ওপর থাকলে কৃষকদের জন্য সুবিধা হয়।
আরও পড়ুন: মজুরি বাড়লেও খুশি হতে পারছেন না শ্রমিক, বিপাকে বোরো চাষি
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, এ বছর জেলায় এক লাখ ৮৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আট লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। শৈত্যপ্রবাহে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আশা করছি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
আব্বাস আলী/জেএস/জেআইএম