কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল ‘এমএ পাস চাওয়ালি’ টুকটুকির কথা। কোথাও চাকরি না পেয়ে পশ্চিমবঙ্গের হাবরা রেলস্টেশনে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে চা বিক্রি শুরু করেন ইংরেজিতে মাস্টার্স পাস টুকটুকি দাশ। স্বপ্ন দেখছিলেন আরও বড় কিছু করার। কিন্তু শুরুতেই বাধা। তার নতুন দোকানটি ভেঙে দিয়েছে ভারতীয় রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনী (আরপিএফ)।
ইংরেজিতে মাস্টার্স করেও চাকরি পাননি বছর ছাব্বিশের টুকটুকি। হাবরা শ্রীচৈতন্য কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হওয়ার পর রবীন্দ্রভারতী থেকে এমএ পাস করেন তিনি। কিন্তু সরকারি চাকরি তো দূরে থাক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও যোগ্যতামতো ডাক পাচ্ছিলেন না। তবে হতাশায় ডুবে যাননি, কঠিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নেমে পড়েন নিজের ভাগ্যবদলের লড়াইয়ে।
চাকরি খোঁজার চেষ্টায় ইস্তফা দিয়ে হাবরা স্টেশনে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান খুলে বসেন টুকটুকি। দোকানের সামনে লেখা ‘এমএ ইংলিশ চাওয়ালি’। নামটা ভেবেচিন্তে নিজেই দিয়েছিলেন, যেন তার দোকান মানুষের নজরে পড়ে।
টুকটুকির এই সাহসী উদ্যোগ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। খবর হয় ভারতের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলোতেও। এরপর হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক টুকটুকি দাশকে একটি দোকান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই অনুসারে স্টেশনের দুই ও তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে সংযোগস্থলে টিনের চালা দেওয়া একটি অস্থায়ী ছোট দোকান তৈরি করে দেয় হাবরা পৌরসভা।
এর মধ্যেই গত বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) হঠাৎ আরপিএফ কর্মীরা ‘এমএ পাস চাওয়ালি’র নতুন দোকান ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও স্টেশনের ওপর শতাধিক দোকান রয়েছে, তবু নিচের ওই একটি দোকানেই নজর পড়েছে তাদের।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আরপিএফ কর্মী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্টেশনে নতুন করে কোনো দোকান বসাতে দেওয়া হবে না। যেসব দোকান আগে থেকে রয়েছে, শুধু সেগুলোই থাকবে। সেজন্যই টুকটুকির দোকানটি ভাঙা হয়েছে।
এদিকে, এই দোকান ভাঙা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূল ও আইএনটিটিইউসির পক্ষ থেকে স্টেশন চত্বরে মিছিলের পাশাপাশি আরপিএফ অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন হাবরা পৌরসভার মুখ্য প্রশাসক নারায়ণ সাহা।
টুকটুকির লড়াই প্রথম থেকেই কঠিন ছিল। উচ্চশিক্ষিত হয়েও চায়ের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে পেরোতে হয়েছে অনেক বাধা। তার ওপর একটা তরুণীকে কেউ দোকান ভাড়া দিতে চাচ্ছিল না। শেষমেশ তাও আদায় করেন টুকটুকি। তারপর শুরু করেন বিভিন্ন স্বাদের চা বিক্রি। বানাতেন সিঙাড়াও। এভাবে যে স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব, তাতে পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী টুকটুকি দাশ।
কিন্তু স্বপ্ন বড় করে দেখার প্রথম ধাপেই পড়লো বাধা। ভাঙা পড়েছে তার নতুন দোকান। এরপরে তার সামনে আরও কী অপেক্ষা করছে, কে জানে!
সূত্র: দ্য ওয়াল
কেএএ/জিকেএস