২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড ইন ১৯৭১’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে তারা এ কথা বলেন।
২৫ মার্চ পঁচিশ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল, ২৫ মার্চ সাত হাজার লোককে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই তথ্যটি সঠিক নয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ন্যূনতম ২৫ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কমলাপুরে ট্রেনের যাত্রীদের, সদরঘাটে লঞ্চযাত্রীদের, বস্তিবাসী, নারী-শিশু এবং ঘুমন্ত মানুষের হত্যা করা হয়েছিল। অপারেশন সার্চলাইটের নামে এক রাতে কসাই ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব এই হত্যাকাণ্ড চালান।
তিনি বলেন, আমাদের মহান জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের জন্য স্বীকৃতি অর্জনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। বর্তমানে ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর বিশ্বের কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটে নাই যে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি যেমন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর প্রেক্ষাপট হচ্ছে এ দিন আমরা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই আমাদের দাবি হচ্ছে ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা। কারণ এইদিন এক রাতে কয়েক ঘণ্টায় এতো লোক হত্যা পৃথিবীর কোথাও হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য আমাদের পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সমস্যা হলো একটা দিবস পরিবর্তনের জন্য জাতিসংঘে ভোটের প্রয়োজন হয়। আমরা আশা করছি বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে, তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমরা পাবো।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে প্রায় তিন কোটি লোক বসতভিটা ছাড়া হয়েছিল। যার মধ্যে এক কোটি লোক ভারতে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। প্রায় ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। কিন্তু যারা এই গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের কারও বিচার হয়নি। এটা দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। এটা পৃথিবীর এমনকি পাকিস্তানের জন্যও লজ্জাজনক।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের কমিশন বলেছিল তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। আমি আশা করবো পাকিস্তানের নতুন প্রজন্ম বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবে। তারা গণহত্যার অপরাধ স্বীকার করবে। তাদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের স্বীকৃতি আদায়ের। ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, যেসব দেশে গণহত্যা হয়েছে, তারাও তাদের দেশের গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক দিবস পালনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে জাতিসংঘ একটা মধ্যপথ অবলম্বন করছে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর গ্রিগোরি স্টেনটোন এবং জেনোসাইড স্কলার ডা. হেলেন জারভিস। সেমিনার সঞ্চালনা করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী।
এসইউজে/কেএসআর/এমএস